মো লুৎফুর রহমান রাকিব, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
গত ০৭/০৯/২০২৪খ্রিঃ সকাল অনুমান ০৮:০০ ঘটিকায় কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার বড় ঘাগুটিয়া মৃত মাহমুদা মাহফুজার নিজ বাড়িতে শয়ন কক্ষে বিছানার উপর মাহমুদাসহ তার মৃত শিশু সাহাদ (০৯) ও তার ফুফাতো ভাশুরের মেয়ে মৃত তিশা (১৫) দের গলায় ফাঁসের দাগ এবং সকলের মাথায় কাঠের আঘাতের চিহ্নসহ মৃতদেহ পাওয়া যায়।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে মৃত মাহমুদার পিতা বাদী হয়ে হোমনা থানায় এজাহার দায়ের করিলে পুলিশ সুপার, কুমিল্লা মহোদয়ের দিকনির্দেশনায়, অতিঃ পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এর প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে ও সহ: পুলিশ সুপার (হোমনা সার্কেল) এবং অফিসার ইনচার্জ হোমনা থানাসহ ফোর্সের সমন্বয়ে হত্যা কান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন পূর্বক আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৭/০৯/২০২৪ খ্রি. তারিখ রাত ০১.৩০ ঘটিকার সময় হোমনা থানার চরেরগাঁও এলাকা হতে অত্র মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আসামী মোঃ আক্তার হোসেন সুমন (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মৃত মাহমুদা আক্তার মাহফুজা (৩০) ও আসামী মোঃ আক্তার হোসেন সুমন (২৮) পরস্পর পূর্বপরিচিত ও দূরসম্পর্কের আত্মীয়। তাদের মধ্যে পূর্ব হতে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক থাকায় মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। উক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে মৃত মাহমুদা আক্তার মাঝে মাঝে আসামীর কাছ থেকে ধারে টাকা নিতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে মাহমুদা আসামীর কাছ থেকে ১০,০০০/- টাকা ধার চায়। আসামী পূর্বের ধারের ৩৫,০০০/- টাকা না পেয়ে নতুন করে ধারের টাকা না দেওয়ায় মাহমুদা আসামীর মা-বাবাকে নিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে আসামীর মনে প্রচন্ড রাগ ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গত ০৫/০৯/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ বিকালে মাহমুদা আসামীকে পুনরায় মোবাইলে ফোন দিলে আসামী পূর্বের ধারের টাকা ফেরত চায়। মাহমুদা আসামীকে ধারের টাকা নেওয়ার জন্য তার বাড়িতে আসতে বললে আসামী ঐ দিনই রাত অনুমান ০৯ ঘটিকার সময় মাহমুদার ঘরে যায়। আসামী আক্তার, মাহমুদা, মাহমুদার ছেলে সাহাদ এবং মাহমুদার ফুফাতো ভাশুরের মেয়ে তৃষা সকলে মিলে পিয়াজু, সিঙ্গারা ও আখ খেয়ে রাত অনুমান ১০টার দিকে সাহাদ ও তৃষা ঘুমিয়ে যায়। এসময়ে আসামী মাহমুদার কাছে পুনরায় ধারের টাকা ফেরত চাইলে সে আবার আসামীর মা-বাবাকে নিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করলে আসামীর মনে প্রচন্ড রাগ ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মাহমুদা আসামী আক্তার কে সকালে টাকা দিবে বলে রাতে তার বাড়িতেই থাকতে বলে। মাহমুদা ঘুমিয়ে পড়লে আসামী তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। গত ০৭/০৯/২০২৪ইং তারিখ রাত অনুমান ০২ ঘটিকার সময় আসামী মাহমুদাকে নিজের শয়ন কক্ষে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগাইয়া ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে। পরবর্তীতে কোনো প্রমাণ না রাখার উদ্দেশ্যে সাহাদ ও তৃষাকেও ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে। আসামী তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য খাটের নিচে থাকা কাঠের ফাইল দিয়ে ০৩ জনেরই মাথায় পিটাইয়া গুরুতর জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে আসামী স্বেচ্ছায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে হোমনা থানার মামলা নং-০১, তাং-০৮/০৯/২০২৪খ্রি. ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড মূলে নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
মৃতদের নাম ও ঠিকানা:
১। মাহমুদা আক্তার মাহফুজা (৩০), স্বামী-মোঃ শাহ-পরান,
২। শাহাদা হোসেন সাহাদ (০৯), পিতা-মোঃ শাহ-পরান,
৩। তাইফা সিনহা তিশা (১৫), পিতা-মোঃ রেজাউল করিম,
সর্বগ্রাম-বড় ঘাগুটিয়া, থানা-হোমনা, জেলা-কুমিল্লা।
আসামীর ঠিকানা:
০১. মোঃ আক্তার হোসেন সুমন (২৮), পিতা- মোঃ হক মিয়া, মাতা- সাহেরা, সাং- চরেরগাঁও (হাজী বাড়ী), ০৬নং ওয়ার্ড, হোমনা পৌরসভা, থানা- হোমনা, জেলা- কুমিল্লা।