শাহরিয়ার কবির,নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনার পাইকগাছায় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। উপজেলার এক হাজার ৪শত ৪৫হেক্টর জমিতে ৫৫হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে বলে জানা যায়। এ অঞ্চলের তরমুজের বাজারমূল্য ৭৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও দাবি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদিত এসব তরমুজ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক। গত বছরের বৃষ্টিতে তরমুজ চাষের ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভবান হবেন বলে চাষিরা মনে করছেন। তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।উপজেলায় লবণপানি, বেড়ীবাঁধের মধ্যে মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি করে দেলুটি, গড়ইখালী ও চাঁদখালী ইউনিয়ানে তরমুজের চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর তরমুজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪ শত ৪৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ফলন ৩৮ থেকে ৪২ টন। মোট ফলন ৫৪ হাজার ৯১০টন। যার বাজার মূল্য ৭৬ কোটি ৮৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বেশী হবে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন মধ্য ৩টি ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গড়ইখালী,দেলুটি ও চাঁদখালীতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে দেলুটি ইউনিয়নে। উপকূলের লবণপানির এলাকায় গড়ইখালী ইউনিয়নের ঘোষখালী নদী ও দেলুটি ইউনিয়নের ডিহিবুড়া খাল খননে বৃষ্টির (মিষ্টি) পানি সংরক্ষণ করে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ তরমুজ ক্ষেত। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে জড়ো করে রেখেছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা তরমুজ কিনতে ক্ষেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দরদাম করে ক্ষেতে কিনে নিয়েছেন। এই তরমুজ ক্ষেত থেকে ট্রলি বোঝাই করে ট্রাক ও কার্গ ভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ট্রলিতে করে এনে ট্রাক ও কার্গ লোড করছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাত করার জন্য ব্যস্ত চাষি ও ব্যাপারীরা। কেউ ক্ষেত হিসাবে তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউবা পাইকারি বাজারে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ তরমুজ ক্ষেত বিক্রি হয়ে গেছে। ৪০ শতাংশ তরমুজ কৃষকের ক্ষেত রয়েছে। প্রতিদিন পাইকগাছা ও পাশের উপজেলা কয়রার আমাদি থেকে ২ থেকে ৩ শত ট্রাক তরমুজ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।স্থানীয় কৃষকেরা জানান,বিগত বছরে তরমুজ চাষে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তবে অনাবৃষ্টির কারণে পানি দিতে অধিক টাকা খরচ হয়েছে।দেলুটি ইউনিয়নের লোচন সরকার বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আমার বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।গড়ইখালী ইউনিয়নের কানাখালী গ্রামের বিজন কুমার মন্ডল বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার খরচ বাদে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে মিষ্টি পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তরমুজ চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এসব এলাকায় খাল খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে পারলে তরমুজের চাষ আরও বাড়ানো যেত। এখন পর্যন্ত বাজারে তরমুজের দাম সন্তোষজনক। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেতের ৬০ ভাগ তরমুজ বিক্রি হয়ে গেছে। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।