মোঃ আসাদুজ্জামান, কপিলমুনি প্রতিনিধি, খুলনা :
নানা প্রতিকূলতা আর সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের প্রথম লাইসেন্সপ্রাপ্ত জোনাকি জাদুচক্রটি বিশ্বজয়ের পথে বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছে।আধুনিকায়নে প্রয়োজন বিপুল অর্থ আর সরকারের সহযোগিতা। বয়সে তরুণ হলেও ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে জাদু প্রদর্শন করে হয়েছেন দর্শক নন্দিত।
চমৎকার উপস্থাপনা এবং সুদর্শন চেহারার জন্য তৈরি হয়েছে হাজারো ভক্ত। তরুণ সমাজে জায়গা করে নিয়েছেন টিনেজ ক্রেজ হিসাবে।গুগলে ম্যাজিশিয়ান পি সি সাহার নাম টপ র্যাঙ্কিং এ পাওয়া যায়।সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে হাজারো ফলোয়ার।পি সি সাহার পৈত্রিক নিবাস খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে।জনপ্রিয় এই জাদুশিল্পী কখনো ভাবেননি জাদুর ঝলমলে রঙ্গমঞ্চ কখনো পদোচারনা ঘটবে।ছেলেবেলা থেকে দারুন ভাবে মুগ্ধ করত বাবা আর পি সাহার জাদু আর কৌতুহলী হয়ে উঠত মন।খুব ছোটবেলা থেকে বাবার কাছ থেকে তালিম নেওয়া জাদুর কলাকৌশল নাটকীয় ভাবে বাস্তবে রূপ নেয় ২০০০ সালে।ওই বছর ১ মে খুলনার গড়ুইখালীর এক মঞ্চে জাদু সূর্য আর পি সাহা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।হাজার দর্শকের চিৎকার চেঁচামেচি উপেক্ষা করে বাবার পোশাক পড়ে মঞ্চে উঠেন পিসি সাহা।ওই মঞ্চে অপূর্ব সব জাদুর কলাকৌশল প্রদর্শন করে দর্শকদের বিমোহিত করেন তিনি। মুহুর্মুহু করতালি আর অগণিত দর্শকের প্রশংসা সুচক বাণী তাকে জাদু জগতে দারুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে।শুরু হয় জাদুর পথে বাক পরিবর্তন।সেই থেকে তার পথ চলা।তিনি ২০০৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত জাতীয় জাদুকরদের সমন্বয় কমিটি জাদুকর পরিষদের সদস্য লাভ করেন।২০০৬ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ যাদুর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদারহুড অফ ম্যাজিশিয়ান এর সদস্য পদ লাভের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেন যা দুর্লভ এবং সম্মানজনক।বয়সে তরুণ হলেও ইতিমধ্যে জাদুতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তিনি।
তাই তো ২০০৭ সালে সম্ভাবনাময় এই শিল্পীর প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তার এবং তার প্রতিভার বিকাশের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তার পিতার প্রতিষ্ঠিত জোনাকি জাদুচক্রের লাইসেন্স তাকে হস্তান্তর করেন।সম্প্রতি অনলাইন বিশ্ব জাদু প্রতিযোগিতায় ৮ দেশের ৬৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন আমাদের জাদুশিল্পী পি সি সাহা।এই প্রতিযোগিতায় ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশ, ফিলিপাইনস,তুর্কি,মেক্সিকো এবং ঘানা-র ৬৫ জন জাদুশিল্পী অংশ গ্রহণ করেন।অতি অল্প বয়সে সম্মানজনক এই সকল প্রাপ্তি তাকে মোটেও অহংকারী করে তোলে না বরং তিনি বলেন সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার প্রেরণা যোগায়।পিতা আর পি সাহার জাদু সূর্য খেতাব প্রদানের অনুষ্ঠান তিনি দেখেছেন,দেখেছেন চোখ প্লাস্টার করে মোটরসাইকেল চালানোর শেষে হাজার দর্শকের মাল্য বরণের দৃশ্য।তাইতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসাকে ধরে রাখতে অল্প বয়সে প্রবেশ করেছেন জাদুর এই ঝলমলে জগতে।
তবে সম্ভাবনাময় এই জাদুকর আক্ষেপ করে বলেন,দুই প্রজন্মধরে প্রায় ৬৫ বছর যাবত বাংলার লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক জাদু প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে সুস্থ ধারার বিনোদনের প্রচার ও প্রসার করে আসলেও শুধুমাত্র প্রচার আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি বা তার পিতা পাননি কোন সরকারি সম্মান।
প্রতিমুহূর্তে তাকে হতে হচ্ছে দারিদ্রতা সম্মুখীন।এতকিছু উপলব্ধির পরেও থেমে নেই আর পি সাহার একমাত্র উত্তরসূরী পিসি সাহা। পিতার ঐতিহ্য আর জনপ্রিয় তাকে আঁকড়ে ধরে প্রয়াত পিতা জাদু সরঞ্জাম অশ্রুমোচন করে নিয়েছেন নিজের করে।আর পি সাহার একমাত্র ইচ্ছা ছিল ছেলেকে জগত বিখ্যাত জাদু শিল্পী হিসেবে দেখে যাওয়ার।সেকারণে একমাত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তিনি তার শিক্ষাগুর নামের সাথে নাম মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখেন পিসি সাহা।
বাবার সেই লালিত স্বপ্নকে পাথেয় করে পিতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অন্তহীন যাত্রা শুরু করেন এই প্রজন্মের জাদু শিল্পী পিসি সাহা।বাবার ইচ্ছা বড় জাদু শিল্পী হতে হবে,এই স্বপ্ন প্রতি মুহূর্তে তাড়া করে চলেছে তাকে।তবে এই শিল্পের কিছু সীমাবদ্ধতা অবলীলায় স্বীকার করেন তিনি। তীব্র প্রতিযোগিতার এই যুগে নতুন নতুন জাদু আবিষ্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আর এই সকল আধুনিক ম্যাজিক সরঞ্জাম না হলে তীব্র প্রতিযোগিতায় বিদেশি জাদুশিল্পীদের সাথে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
কিন্তু কোথায় পাবেন সেই অর্থ এই চিন্তা তরুণ জাদুকর পি সি সাহাকে উৎসাহীন করে তোলে।পৃষ্ঠপোষকতা আর সঠিক পরিবেশ পেলে এই শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে সক্ষম এমন আশা ও ব্যক্ত করেন তিনি।পি সি সাহার বর্তমান উল্লেখযোগ্য জাদু প্রতিভার মধ্যে অ্যাপিয়ার বক্স,টূয়েস্টিং লেডি,এরিয়াল সাসপেনশন,ফ্লোটিং কার্পেট,হ্যান্ড স্ট্রাইকাট,ফ্লাইংহেড ও অরিগামি উল্লেখযোগ্য এছাড়াও চোখ প্লাস্টার করে জনবহুল রাজপথে চালনা এবং মানুষকে ৪খণ্ড করা এমন সব শিহরণ জাগানো যাদু প্রদর্শন দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন পিসি সাহা।তবে বর্তমান অত্যাধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পিসি সাহার প্রয়োজন আরো অত্যাধুনিক যাদুর সরঞ্জাম, আর এই সকল সরঞ্জামের জন্য প্রয়োজন অর্ধ কোটি টাকা।যা পি সি সাহার একা পক্ষে বহন করা অসম্ভব বাংলাদেশের একমাত্র লাইসেন্স প্রাপ্ত ম্যাজিক পার্টি জোনাকী জাদুচক্রে (লাইসেন্স নং-০৯/১৯৭৫-৭৬, বর্তমান-০১/০৭-০৮)
আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাচিয়ে রাখতে পি সি সাহা সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি মিডিয়ার সুদৃষ্টির প্রতি আহ্বান জানান। সকল প্রতিকূলতাকে পিছু ফেলে তার অনন্যের জয় রথে বাংলাদেশ থেকে সারা বিশ্বজয়ের পরিভ্রমণে এগিয়ে যাবে পিসি সাহা এমন প্রত্যাশা সকলের।