সমাজ চেতনা ডেস্ক : সাতক্ষীরার তালায় ভারী বর্ষণে ও বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা অফিস সুত্রে জানা যায়। উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন অর্থাৎ নগরঘাটা, খলিশখালি, খেশরা ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়াও বাকী ইউনিয়ন গুলোতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এসকল ইউনিয়নে কাঁচা আধাপাকা ঘর, গ্রাম্যরাস্তা ডুবে সরকারের প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । এছাড়াও মৎস্য ঘের ভেসে যাওয়ায় মৎস অফিস সুত্র বলছে, প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপর দিকে কৃষি অফিস সুত্রে বলছে , কৃষির আওতাভুক্ত ফসলি জমি তলিয়ে ২৭ কোটি ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন এই বন্যা প্লাবিত মানুষের পাশে দাড়াতে সকলকে আহবান জানিয়েছেন।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর ) সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের নিম্ম অঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট, মাছের ঘের, ধানের ক্ষেত, সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপ তলিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় আশ্রায় নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও আশ্রয় কেন্দ্রে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল উপজেলার নিম্মাঞ্চল প্রতিদিন পরিদর্শন করছেন।
বন্যা কবলিত এলাকাবাসী জানান, ভারি বর্ষন ও বাঁধভেঙ্গে আমাদের এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। ফলে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আমাদের ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, পুকুর, মৎস্য ঘের এবং ফসলি জমি তলিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমরা বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। যদি দ্রুত পানি না সরে তাহলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হব আমরা। তবে লক্ষ্য করা গেছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।
খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লালটু জানান, খেশরা ইউনিয়নে মোট ২২টি গ্রাম আছে। তার মধ্যে ৯ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আর ২টি গ্রাম আধা ক্ষতি এবং বাকী ১১টি গ্রাম আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ৯টি গ্রামের মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আবস্থান করছে। তবে এদের খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন বলেন, উপজেলাব্যাপী কৃষি ফসলের ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের কাজ এখনও চলমান রয়েছ । তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আমন, ঘেরের ফল ও অন্যান্য ২ হাজার ৫শ ৫৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে ২৭ কোটি ৬ লাখ টাকার মত। তবে এখনি যদি পানি কমে যায় তাহলে ক্ষতির পরিমান স্থিতিশীল থাকবে। আর যদি পানি কমতে বিলম্ব হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে তিনি ধারনা করছেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলি বলেন, উপজেলায় ১০২৭ টি মাছের ঘের সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আয়তন ৯০৫ হেক্টর। তবে এর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা হবে বলে এই মৎস্য কর্মকর্তা জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ রাসেল জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নিম্মাঞ্চল ভারী বর্ষন ও বাঁধভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। এতে তালাবাসীর একটি অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা নদী বা খাল থেকে অবৈধ নেটপাটা অপসারণ করেছি। আমাদের উপজেলার ২ টি পয়েন্ট দিয়ে পানি সরবরাহ হয়। একটি হল শালিখা, অন্যটি আশাশুনি। তবে জরুরী ভাবে পানি সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি মেশিন দিয়ে শালিখা পয়েন্টে চেষ্টা করছে যাতে দ্রুত পানি সরে যায়। কিন্তু একটি মেশিনের কাজ ওটা না। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি মেশিন বাড়াতে হবে। তবে আশা করছি, দুই এক সপ্তাহের মধ্যে পানি সরে যেতে পারে।