সমাজ চেতনা ডেস্কঃ রাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদটি ৯৩০ হিজরী মোতাবেক ১৫২৩- ১৫২৪ সালে হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন হুসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ(১৫১৯-১৫৩৩) নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদের সংস্কার করা হয়। মসজিদের গম্বুজগুলো ভেঙ্গে গেলে ১৮৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নতুন করে ছাদ দেয়া হয়। ২৫৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত মসজিদটির আঙিনা সমভুমি থেকে ৮-১০ ফুট উঁচুতে নির্মিত। বর্তমানে এর উত্তর পাশের ফটকের ওপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। মসজিদটির বাহিরে ১০টি গম্বুজ আর ভেতরে ৬টি স্তম্ভ রয়েছে । মসজিদটিতে ৪টি মেহরাব রয়েছে যা অত্যন্ত কারুকার্য খচিত। দৈর্ঘ্য ৭৫ ফিট, প্রস্থ ৪২ ফিট, উচ্চতা ২৪ ফিট ৬ ইঞ্চি। দেয়াল চওড়া ৮ ফিট গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফিট, উচ্চতা ১২ ফিট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফিট উচ্চতা প্রায় ৩০ ফিট। মাঝখানের দরজার ওপর ফার্সি ফিট লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। এছাড়া আছে পোড়ামাটির অসংখ্য কারুকাজ যার ভেতরে রয়েছে আমগাছ, শাপলা ফুল, লতাপাতাসহ ফার্সি খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। মসজিদটিতে ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই মসজিদটি চারদিক হতে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং প্রাচীরের দু’দিকে দু’টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভিতরে-বাইরে সবর্ত্রই টেরাকোটার নকশা রয়েছে। মসজিদের পাশে অবস্থিত বিশাল দিঘীটিও একটি দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও বাঘা মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি মাজার শরীফ। এছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণের উত্তর পাশেই রয়েছে হজরত শাহদৌলা ও তার পাঁচ সঙ্গীর মাজার। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহর পুত্র নাসিরউদ্দীন নসরত শাহ জনকল্যাণার্থে মসজিদের সামনেই একটি দিঘী খনন করেন। শাহী মসজিদ সংলগ্ন এ দিঘিটি ৫২ বিঘা জমির ওপর রয়েছে। এই দিঘির চারপাশে রয়েছে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ। প্রতিবছর শীতের সময় এ দিঘিতে অসংখ্য অতিথি পাখির কলতানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে দিঘিটির চারটি বাঁধানো পাড় নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এ মসজিদ সংলগ্ন জহর খাকী পীরের মাজার রয়েছে। মূল মাজারের উত্তর পাশে রয়েছে তার কবর। এ ছাড়া মসজিদ সংলগ্ন মাটির নিচ থেকে মহল পুকুর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯৭ সালে মাজারের পশ্চিম পাশে খনন কাজের ফলে ৩০ ফুট বাই ২০ ফুট আয়তনের একটি বাঁধানো মহল পুকুরের সন্ধান মিলেছে। এই পুকুরটি একটি সুড়ঙ্গপথ দিয়ে অন্দরমহলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিন দিক থেকে বাঁধানো সিঁড়ির ভেতরে নেমে গেছে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক। মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে নির্মিত একটি বিশেষ নামাজের কক্ষ আছে। এ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৩ দিন পর্যন্ত ‘বাঘার মেলা’র আয়োজন করা হয়। এ মেলাটি ৫০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আছে।