বিনয়ী, নম্রতা,ভদ্রতা, সমীহ প্রদর্শন দেখানোকে যখন বোকামি আর আনস্মার্টের সনদ দেয়, তখন সে সমাজকে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে হাঁক থু দেওয়ায় শ্রেয়।আজকের যুব সমাজ অবক্ষয়ের পিছনে প্রযুক্তির চেয়ে আমি মনে করি মুরুব্বিদের হীনমন্যতায় বেশি দায়ী।আজ কেউ ভদ্র ছেলে হতে ভয় পায়।পাছে তাকে আনস্মার্ট ভাবেন সমাজের কিছু মুরুব্বি, যাদের মাথায় সাদা চুল নামক মেঘের নিচে গোবর ভর্তি মগজ।শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে, ভালো ছেলেদের কেউ ভাল বাসে না। সহানুভূতি দেখায়।আপনি অনেক ভালো ছেলে। আপনার অনেক সুনাম।সিগারেট না খেয়ে মর্ত্যের মাথা তুমি একাই বানাইছো, আরে ভাই চায়ের দোকানে যে মুরুব্বি তোমায় খুব গুণগান করে, প্রশংসা করতে করতে পানের সিপি (থুথু) স্প্রে করে ফেলে, দিন শেষে তার একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই দেখো। আগে তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে দশপাতার বিশাল অঙ্ক কষে ফেলবে। তুমি সিগারেট খাও? তুমি গাজা খাও?মারামারি করো? নো প্রবলেম। বাপের যদি টাকা থাকে তবে তোমার দোষ হাটুর নিচে।তখন মুরুব্বি বলবে, এ বয়সে এট্টু এরকম হয়।বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে।তুমি অনেক প্রেম করো, তুমি খুব স্মার্ট। মেয়েরা আগে তোমাকেই চায়।তুমি ভালে ছেলে তোমারও কদর আছে।গাঁজা খাওয়া স্বামীর অত্যাচারে পালিয়ে আসা ডিভোর্সি মেয়ের মন তুমি পাবে। কারণ তুমি ভদ্র, তখন তোমার অনেক দাম। মানে টাটকা জুটবে না, বাসি বৌ তুমি পাবে।আর নয় তো ভদ্র হয়ে প্রেম করো নি কখনও, তাহলে তোমার কপালে জুটবে নিশ্চিত পার্কের বাগানে পাপের গন্ধে ছিটকে পড়া কোনো বখাটের এঁটো প্রেমিকা।
তুমি ভালো ছেলে, সিগারেট খাও না, প্রেম করো না। এটা কোন গর্ব নয়, বরং তোমার কপালে আসছে এঁটো সমুচা, এঁটো সিংগাড়া কিংবা ভাঙা কাচের মত হৃদয়। পুড়ে খাক হওয়া কোন প্রেমিকার হৃদয়। তুমি আজও বাঙালি পোশাক, বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করো? তবে তুমি বড্ড সেকেলে। আর এই হীনমন্যতার মনোভাব থেকে যতদিন সমাজ বের না হবে, বিশ্বাস করুন, ততদিন এ সমাজে আর আদর্শ ছেলের জন্ম হবে না।আমার জিবনের সবচেয়ে অনর্থক একটা কবিতা পড়েছি ছোটবেলায়, আর সেটি হলো কবি কুসুমকুমারী দাশের আদর্শ ছেলে কবিতাটি।এভাবে আস্তে আস্তে সমাজ থেকে বিলুপ্ত হবে আদর্শ ছেলে। আজ ভালো ছেলেগুলো খুবই অসহায়। প্রেমিকার কাছে, পরিবারের কাছে, কর্মক্ষেত্রে,কিংবা সমাজে সম্মানের আসনের কাছে। আমি খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম যেদিন আমার কলেজের কোন এক বান্ধবী বলেছিল, তুই সিগারেট খাস না? তোর তো পৌরুষত্বই নাই। সেদিন বুঝেছিলাম, খুব শীঘ্রই পৃথিবীতে বড় ধরণের বিবর্তন হবে, বিবর্তন।এ সমাজে কখনও নিউটন, গ্যালিলিও হবে না, কারণ এখানে পড়ালেখা হয় জ্ঞানার্জনের আশায় নয়, বড়লোক হওয়ার আশায়। ঐ যে জ্ঞান নয়, টাকাই যখন ক্যারিয়ারের মাপকাঠি। এখানে সভ্যতা হাতে কলমে শেখানো হয় না।এখানে শেখানো হয় কোন বিজ্ঞানী কবে শেষ প্রস্রাব করেছিল, কিংবা কোন বিজ্ঞানীর বাসায় কবে আতুড় পড়েছিল, সেগুলো গেলানো হয় মুখস্থ না হলে ঠোটস্হ করিয়ে।এখানে এখন জাতি গঠনের কারিগররা আর মহান নেই, এখানে এখন মুলপ্রতিপাদ্য বিষয়, সরকার দু'পয়সা মাইনে দেয় বলে কি আমরা ছেলেদের মানুষ করার দ্বায়িত্ব নিয়েছি।চলছে কোচিং নামক রমরমা ব্যবসা। আজ আর সৃজনশীলতা উথলে উঠে না। পরীক্ষায় নকল করা ছেলটির এ+ এর অনেক দাম, কিন্তু দাম নাই স্কিলধারী ছাত্রের। মেধাশূন্য হয়ে যাবে এ ভূখন্ড, একদিন এখানে সবুজের মত বিলীন হবে বাঙালির মেধা। খা খা করবে মরুভূমির মত। তারপর বিবর্তন হবে। আমরা হয়ে উঠবো মানুষ থেকে বন মানুষ, নয়তো তার চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু। এ সমাজ, এদেশ পিছিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র আমাদের বিকৃত মানসিকতার জন্য। এখনও সময় আছে, নয় তো বিবর্তন কাউকে ছাড় দিবে না। এ সমাজের বলৎকার অবশ্যাম্ভাবী।
লেখকঃ
ফাতেহ মুনির
গনিত বিভাগ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ।
সম্পাদক: এস,কে রায়হান
ঠিকানাঃ প্রধান কার্যালয়ঃ নিরিবিলি বাজার, শাহপুর, তালা, সাতক্ষীরা। মোবাইল ০১৭১২-৯৯৫৮১৮ ইমেইল: somajchetona1122@gmail.com
somajchetona