মো লুৎফুর রহমান রাকিব, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ
শাসনগাছায় জনৈক শাহাদাত হোসেন রাশেদ বাসা ফেরার পথে নোয়াপাড়াস্থ ধান গবেষণা ইন্সিটিটিউটের সামনে পৌছালে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। অজ্ঞাত নাম্বারের একটি মোটর সাইকেল যোগে ০৩জন অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী পুলিশ পরিচয়ে হ্যান্ডকাপ ও অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে রাশেদের কাছ থেকে নগদ ৪০,০০০/-টাকা ও ০১টি আইফোন-১১ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ উক্ত ঘটনায় ছিনতাইকারীদের পুরো চক্রকে সনাক্ত করতে কাজ করতে থাকে।
ফাহমিদা আক্তার কোতয়ালী মডেল থানাধীন রাজগঞ্জ হতে রিকশাযোগে নানুয়ার দিঘীর পূর্ব পাড় (বজ্রপুর লামাপাড়া) রাস্তার উপর পৌঁছা মাত্রই অজ্ঞাতনামা ০৩ জন দুষ্কৃতিকারী মোটর সাইকেলযোগে এসে তাদের সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিক্সার গতিরোধ করে এবং তার সাথে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। উক্ত ভ্যানিটি ব্যাগে ১। স্বর্ণের চুড়ি ০২টি যার ওজন প্রায় দেড় ভরি, ২। নগদ ৪১,০০০/- টাকা, ৩। ০৩টি মোবাইল ফোন সেট, ০৪। পূবালী ব্যাংক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখার চেক বহি রক্ষিত ছিলো।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ তদন্তে নামে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলের সার্বিক তত্বাবধানে কোতয়ালী থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের একটি যৌথ টিম স্থানীয় সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত সুমনকে কোতয়ালী থানাধীন ০৬নং জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ধনপুর হতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে এবং দেখানো মতে সুমন এর ভাড়া বাসার খাটের নিচ হতে ০১টি পাইপগান, ০২টি কার্তুজ, ০১টি রামদা, এবং ওয়ারড্রফ এর ভেতর থেকে ছিনতাইকৃত ০১টি বারআনা ওজনের স্বর্ণের চুড়ি, ১১০টি বিভিন্ন তালার চাবি, ০২সেট হাইওয়ে পুলিশের ডিপ সাইন সংযুক্ত পোশাক ও ০১ জোড়া বিডি পুলিশের কেডস্, ০১টি হ্যান্ডকাপ, ১০টি ছিনতাইকৃত মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, ০২টি কম্পিউটারে কম্পোজকৃত লেমিনিটিং মোটর সাইকেলের ভূয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং ০১টি হেলমেট সহ ০১টি ১৫০সিসি পালসার মোটর সাইকেল, ০১টি র্যাপ রোড মাস্টার মোটর সাইকেল উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
সুমনের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাইয়ে তার সহযোগী রায়হানকে গ্রেফতারের জন্য তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তার বসত ঘর হতে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ০১টি পালসার ১৫০সিসি মোটর সাইকেল, ০১টি পিকআপ গাড়ী, ০১টি তালা কাটার যন্ত্র, ষ্টীলের কভার সহ ০২টি চাকু, ০১টি এসএস ষ্টীলের হাতলযুক্ত দ্বিফলা কুড়াল, ০৫টি কাঠের হাতলযুক্ত হাতুড়ী, ০৩টি বিভিন্ন সাইজের সেলাই রেঞ্জ এবং ছিনতাইকৃত ১১টি ব্যাক প্যাক ও ১০টি মানি ব্যাগ উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
সুমনের দেওয়া তথ্য মতে তার অপর সহযোগী সুজন (৩৫)কে সদর দক্ষিণ থানাধীন পুরান চৌয়ারা গ্রামের জনৈক শফিক মিয়ার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত সুজনের দেখানো মতে তার ভাড়া বাসা হইতে ০১টি সুইচ গিয়ার চাকু, ছিনতাইকৃত ০৫টি মহিলাদের পার্স এবং ছিনতাইকৃত ১২৭৫০/- টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
সুমন ও সুজনদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট এর সামনে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে এবং তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক লুষ্ঠিত টাকার মধ্যে ১২৭৫০/- টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। ছিনতাইকারীরা জানায় যে, তারা কুমিল্লা শহর সহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় পুলিশ পরিচয়ে ৮/১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতার এবং লুষ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে।
সুমনের বাসা হইতে উদ্ধারকৃত অস্ত্র সংক্রান্তে অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা রুজু করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের নাম ও ঠিকানা:
১। সুমন (৩৬), পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম ও সিরাজ মিয়া, মাতা-মনোয়ারা বেগম, সাং-২য় মুরাদপুর, কোতয়ালী, কুমিল্লার বিরুদ্ধে ০৩টি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা, ০২টি চুরি মামলা, ০১টি অস্ত্র মামলা, অন্যান্য ধারায় ০২টি মামলা সহ মোট ০৮টি মামলা রয়েছে।
২। সুজন (৩৫), পিতা-মৃত সেলিম মিয়া, সাং-২য় মুরাদপুর, থানা-কোতয়ালী, জেলা-কুমিল্লার বিরুদ্ধে ০২টি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা, ০১টি চুরি মামলা, ০৩টি অন্যান্য ধারায় মামলা সহ মোট ৩৬টি মামলা আছে।
উদ্ধারকৃত আলামত: ০১টি পাইপগান, ০২টি কার্তুজ, ০১টি রামদা, এবং ওয়ারড্রফ এর ভেতর থেকে ছিনতাইকৃত ০১টি বারআনা ওজনের স্বর্ণের চুড়ি, বিভিন্ন তালার চাবি ১১০টি, হাইওয়ে পুলিশের ডিপ সাইন সংযুক্ত ০২সেট পোশাক ও বিডি পুলিশের কেডস জুতা ০১ জোড়া, ০১টি হ্যান্ডকাপ, ছিনতাইকৃত মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ ১০টি, ০২টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর কম্পিউটারে কম্পোজকৃত লেমিনিটিং করা এবং তার ভাড়া বাসার উঠানের পাশে রাখা ০১টি হেলমেট সহ ০১টি পালসার ১৫০সিসি মোটর সাইকেল, ০১টি ব্যাপ রোড মাস্টার মোটর সাইকেল, ০১টি পালসার ১৫০ সিসি মোটর সাইকেল, ০১টি পিকআপ গাড়ী, ০১টি ভালা কাটার, স্ত্রীলের কভার সহ ০২টি চাকু, ০১টি এসএস স্টীলের হাতলযুক্ত দ্বিফলা কুড়াল, ০৫টি কাঠের হাতলযুক্ত হাতুড়ী, ০৩টি বিভিন্ন সাইজের সেলাই রেঞ্জ এবং ছিনতাইকৃত ১১টি ব্যাক প্যাক ও ১০টি মানি ব্যাগ, ০১টি সুইচ গিয়ার চাকু, ছিনতাইকৃত ০৫টি মহিলাদের পার্সব্যাগ এবং ছিনতাই পরবর্তী ভাগে পাওয়া ১২৭৫০ টাকা।