আব্দুল্লাহ আল মামুন, দেবহাটা প্রতিনিধিঃ দেবহাটার ঢেপুখালি ভূমিহীন পল্লীতে ভোর রাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে লুটপাট এবং জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ই জানুয়ারি) দিবাগত ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঢেপুখালি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তর্ত ১৩ জনের অধিক আহত খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি উভয় পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক এজাহার দায়ের করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী আনারুল ইসলাম ও আবুল কালাম জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঢেপুখালি গ্রামের রূপচাঁদ গাজীর ছেলে একাধিক মামলার আসামি রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া একটি বাহিনী নিয়ে ঢেপুখালি গ্রামের ছফেদ আলী, মৃত. ইমান আলী ও আব্দুল মজিদের জমি দখল ও বাড়িতে হামলা করে। এসময় বোমা ফাটিয়ে, উড়ো গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় ছফেদ আলীর বাড়ি থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, ২টি খাসি ছাগল এবং ইমান আলীর বাড়ি থেকে স্বর্ণলঙ্কার লুটপাট করে বসতবাড়ি ভাংচুর করেতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রামবাসি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৬ জনকে ধরে ফেলে মারপিট করে। এঘটনা জানা মাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১৬ জনকে উদ্ধার করে দেবহাটা থানায় আনার পর আহতদের মধ্যে ঢেপুখালি গ্রামের কালিগঞ্জ নলতা সন্ন্যাসী চক এলাকার মৃত রূপচাঁদ আলীর ছেলে ভূমিদস্যু রুহুল আমিন,(৬৫),নলতা ইউনিয়ন ইন্দিনগর গ্রামের ভূমিদস্যু আবুল হোসেনের স্ত্রী ভূমিহীন নেত্রী রোকেয়া খাতুন, (৫৪),কালিগঞ্জ কুশলে ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের ভূমিদস্য মনসুর আলীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম, (৫৫)কালাবেরিয়া গ্রামের রায়হানের স্ত্রী নূরনাহার বেগম, (১৭)কালাবেরিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সজীব হোসেন, (১৭)কালাবাড়িয়া ভূমিদস্যু রুহুল আমিনের দ্বিতীয় স্ত্রী তানিয়া বেগম, (৩৮)কালিগঞ্জ কুশলে ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের মৃত মাদার গাজীর ছেলে ভূমিদস্যু মনসুর আলী,(৬৫) দেবহাটা পারুলিয়া ইউনিয়নের আব্দুল খালেকের ছেলে মমিন হোসেন,(২০)সখিপুর ইউনিয়নের নেসার সর্দারের ছেলে সজীব হোসেন, (১৭)রবিউল ইসলামের ছেলে মারুফ হোসেন(,২১) শফিকুল ইসলামের ছেলে সাকিব হোসেন,(১৭) নজরুল ইসলামের ছেলে তৈবুর রহমান,(১৮) আজারুল চৌকিদারের ছেলে তাজমীর হোসেন। সহ কয়েকজন পুলিশ হেফাজতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে সাতক্ষীরা জেলা সদরে প্রেরণ করে চিকিৎসক।
বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করে ছফেদ আলী সরদার জানান, ১৯৯৭ সালে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা রামনাথপুর মৌজার ৪৬১৭ দাগে প্রায় ১৪০ বিঘা জমি কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন। পরে ওই জমি সরকার খাস তালিকায় অন্তভূক্ত করায় বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলতে থাকে। এরমধ্যে ভূমি দস্যু রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী তানিয়া খাতুন বিভিন্ন সময় উল্লেখিত জমি দখলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই জের ধরে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন হামলা ও লুটপাট করে আসছিল রুহুল আমিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই সুত্র ধরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আতঙ্ক সৃষ্টি, লুটপাট জমি দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা।
অপরক্ষের তানিয়া খাতুন জানান, পূর্বের শক্রতার জের ধরে ছফেদ আলী, তার ২ ছেলে, নাজমুল, রাশেদুল সহ বেশকয়েক জন আমাদের বাড়িতে এসে হামলা করে ব্যাপক মারপিট করে। এতে আমাদের আহত করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লুটপাট করেছে।
অপরদিকে আটককৃত তাজমির, মোমিন, সাব্বির, সজিব সহ কয়েকজন যুবকের দাবি, রুহুল আমিনের ছেলে তানভীর হোসেন তাদের বন্ধু। বুধবার রাতে পিকনিকের নাম করে তার বাড়িতে খাওয়ার দাওয়াত করে। রাতে খাওয়া দাওয়া করে সেখানে অবস্থান করছিল তারা। তবে এ ঘটনা সম্পর্কে তারা আগে থেকে কিছুই জানত না বলেও দাবি তাদের।দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুস সালাম সিদ্দিক জানান, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ থেকে দেবহাটা থানায় পৃথক পৃথক এজাহার দায়ের করেছে।
দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ জানান, ঢেপুখালিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখান থেকে কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া পরে আহতদেরকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।