নুরুজ্জামান (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ সংবাদদাতাঃ
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেইতো হাসি ঈদ সারাদিন উৎসব আর প্রিয়জনের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের আনন্দ ভাগাভাগী করার নামই ঈদ ।সিয়াম সাধনার একটি মাস পালন শেষ করার মাধ্যমে ঈদ পালন করা হয়ে থাকে ।ঈদ বড়দের চেয়ে ছোটদের বেশী আনন্দ দিয়ে থাকে । তবে ঈদ সবার মনে একটু চোঁয়া দিয়ে যায়, বিশেষ করে ঈদুল ফিতর বা রমজান ঈদ। বাড়তি একটা ব্যাস্ততা থাকা হয় না এই ঈদে।
বাজ্ঞালী তথা মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব এটি আবেগ, অনুভূত্ আনন্দ, উচ্ছাসের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ঈদ পালিত হয়। সারা বছর দেখা না হলে ও ঈদের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে সমাজের দেশের পুরনো অনেক গুলো পুরনো প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হয় এই দিনে। একে অপরের সাথে কোলাকুলির মাধ্যমে ভাবের আদান প্রদান হয়ে থাকে। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে ঈদ আনন্দ নিয়ে আসে না আর তারা হলেন প্রবাসী।
দেশের সূর্য সন্তান, রেভিটেন্স যোদ্ধা । যারা নিজের কথা না ভেবে পরিবার ও দেশের জন্য নিরবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকৃত পহ্মে আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের দেহ থাকে বিদেশে আর মন পড়ে থাকে দেশে, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের দেশ ও পরিবার নিয়ে ভাবতে থাকি।
প্রবাশ জীবন মানেই সংগ্রামী জীবন। উন্নয়নের সংগ্রাম ,এ জীবন কর্মমুখোর প্রতি নিয়ত সংগ্রাম করে চলতে হয় এইখানে। ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না- সেমাই খেয়ে যাও।
শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনের মূল কর্মসূচি। ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু’একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি অনেকের সাথে আলাপ করে এমনটি প্রকাশ করে সবাই।
কুয়েত প্রবাসী গোলাম রহমান প্রবাসী ঈদের অনুভূতি নিয়ে বলেন প্রবাস মানে হয়ছে সংগ্রাম।যা করে প্রতিদিন আমাদের টিকে থাকতে হয়, ,,কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।আর প্রবাসে ঈদ মানে আমাদের কোন আনন্দ নেই।
প্রতিদিনের মত জীবন যুদ্ধে লড়াই করা।প্রবাসীদের কষ্ট কেউ বোঝে না। আর তারা কাউকে কিছু বুঝতে ও দেয় না।।পরিবার যখন জিঙ্গাসা করে।ঈদে তুমি কি নিছো। তখন তারা ডিউটি অবস্থা থাকাকালীন বলে আমি তো শপিং করতেছি।তোমরা কিনছো।কিন্ত তা চরম মিথ্যা কথা। তারা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কিসের ঈদ কিসের শপিং। তারা একটা জিনিসে আনন্দ খুজেঁ পায়,,,,শুধু প্রিয় মানুষদের একটু হাসিতে।
ভালো থাকুক সকল অভিনেতা প্রবাসী। কুয়েত প্রবাসী গোলাম রহমান বলেন আমার কোন অনুভূতি নাই।।দেশের মানুষের মুখে হাসি দেখলে অনুভূতিটা ভাল লাগে এই।এখন আমাদের কোন অনুভূতি নাই! এখন আমাদের সব হল পরিবার আর দেশের মানুষের সুখ দেখেই ভাল লাগে আর এটাই অনুভূতি।
একজন নির্মাণ প্রকৌশলী ও সংবাদ কর্মী ।প্রবাস জীবনে এই প্রথম প্রবাস ঈদ পালন করতে যাচ্ছি ,পরিবার ত্ত মা হারা সন্তান গোলাম রহমান বলেন বলেন বাবা ভাই বোনদের সাথে ঈদ পালন করার মজাই আলাদা ।ঈদের ফযর নামাজ আদায় করে ,কবরস্থান জেয়ারত করে শুরু হত এই দিনটি ।নতুন পাঞ্জাবি পরে প্রথমেই আম্মুকে সালাম করে শুরু করতাম ভিন্নদের সালাম করা।
এক সময় ঈদের সালামী পাওয়া হলে ও ধীরে ধীরে তা নিজেকে দিতে হত । তবে সালামী নতুন টাকাটি ছোটদের হাতে দেয়ার মাঝে একটা আনন্দ আছে। বাড়ির সবার সাথে দেখা করে সালামি পর্ব শেষ করে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য রওনা করা হত। নামাজ আদায় করে বন্ধু বান্ধবদের সাথে কুলাকুলি করে ,বাসায় ফিরে আম্মুর হাতে নানা পিঠা ও সেমাই খাওয়ার মধ্য দিয়ে কেটে যেত ।দেশের সেই ঈদের আনন্দের দিনগুলো আজ বারবার মনে পড়ছে। তখন ঈদের জন্য কত কিছু বাজেট করতাম।
এত টাকা দিয়ে শপিং করব, ওখানে-সেখানে যাব, ওখানে এটা খাব। এ রকম আরও কত যে পরিকল্পনা করতাম তার শেষ নেই। আম্মু এটা রান্না করো, ওটা রান্না করো, কত বায়না। অনেক বেশি মিস করছি মা তোমাকে আর তোমার হাতের রান্না। মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ছাড়া ঈদ যেন ঈদ নয়, অপূর্ণ ঈদ অনেক কষ্টের ঈদ। দাদা দাদু কে পাইনি ,নানা ছিল তিনি ও না ফেরার দেশে চলে গেছেন ।গত কয়টি বছর মা ছিল একমাত্র যে সালাম করার সাথে সাথে বুকে টেনে নিয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন ,মা বলতো তুমি আমার স্বামীহারা নিঃসঙ্গ জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সবার সেরা, পুত্র গোলাম রহমান মিস করবো সব কিছুই এইবার। কিন্তু এইবার এটি আর হচ্ছে না মিস করতে হবে সব কিছুই ,অন্য সবার মত আমাকে ও প্রবাস জীবনের ঈদ পালন করতে হব।
এত সব আনন্দ ছাড়া ঈদ পালন করা খুবই ক্ষতের।প্রতিবার পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কাপড় নিজে নিয়ে প্রছন্দ করে কিনে দিতে হত , কিন্তু এইবার শুধু দূর থেকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েই ঈদের এই আনন্দে অংশ গ্রহন করতে পারলাম, ভোগে সুখ নেই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ প্রবাস জীবনে এই তার জলন্ত প্রমান। আর এই পরিহ্মা প্রবাসী সন্তানরাই দিয়ে আসতেছে। দেশে-বিদেশে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক