মহিউদ্দীন বাপ্পী : দেশের দক্ষিন- পশ্চিম অঞ্চলের সব চেয়ে বড় গরুরহাট যশোরের শার্শার বাগআঁচড়ার সাতমাইল বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে জমজমাট বিশাল এই গরু হাটের চেহারা রাতারাতি পাল্টে গেছে। এবং বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার(২০ আগষ্ট) সকালে গরু ব্যাপারীদের আন্দোলনের মুখে হাটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গরুর ব্যাপারী হারুন বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে এই হাটের সাথে জড়িত। এখানে গরু কেনা বেচা করি। এবার হাটটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতাশায় ভুগছি। কারণ সারাবছর ধরে গরু খামারের গরু লালন-পালন করে এখন মাথায় হাত দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাইরে থেকে ব্যাপারি না এলে আমাদের গরু লোকশানে বেচাকেনা করতে হবে।
সরেজমিনে ব্যাপারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বৈরাচারের আমলে হাটটি ইজারা না নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাটটি পরিচালনা করতো স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কবির বকুল ও কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসান ফিরোজ টিংকু। তাদের কাছ থেকে ব্যাপারিরা ৩ হাজার টাকা করে ব্যাপারি কার্ড গ্রহন করলেও গরু প্রতি তাদের কাছ থেকে ৫ শত টাকা করে আদায় করা হতো এবং সাধারণ ক্রেতাদের কাছে থেকে গরু প্রতি ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকা আদায় করা হতো। অথচ গরু হাট ইজারা না হওয়ায় সরকারি পাশ রেট ছিলো ৪ শত থেকে ৬ শত টাকা।স্বৈরাচার পতনের পরে হাটটি পরিচালনায় আওয়ামীলীগের ওই সকল নেতা না থাকলে ও ছাত্রজনতা সাথে নিয়ে হাটটি ২ দিন পরিচালনা করছিলেন উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন সভাপতি বকুল ও টিংকুর কাছ থেকে করা সেই কার্ড এর কোন সুবিধা পাইনি কার্ডধারী ব্যাপারিরা।এখন হাটে কার্ডধারী ব্যাপারী ও সাধারণ ক্রেতাদের একই মুল্যে গরু পাশ শুরু হলে ক্ষোভে ফু্সে উঠে কার্ডধারী ব্যপারীরা হাটে আন্দোলন শুরু করলে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা অবনতি থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় হাটটি বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য,সারাবছর যশোর এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের গরু ব্যবসায়ী এবং খামারিরা গরু ক্রয় বিক্রের জন্য আসেন এ হাটে। সাতমাইলের হাট থেকে গরু কিনে ব্যবসায়ীরা সারাদেশে গরুর প্রায় অর্ধেক চাহিদা পূরণ করে থাকেন। হাট বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা।দক্ষিণ বংগের সর্ববৃহৎ এ হাটটি বন্ধ হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছে এই এলাকার গরু ব্যবসায়ী ও খামার ব্যবসায়ীরা।
তবে এলাকাবাসী থেকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন হওয়ায় এ হাট বন্ধ করা হয়েছে । দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠা ভারতীয় এবং স্থানীয় গরুচাষী ও খামারিদের সাতমাইল গরুর হাট গরু ও ক্রেতার অভাবে এখন খাঁ খাঁ করছে।
সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার প্রতিদিন গড়ে কমপে ৫ হাজার গরু কেনাবেচা হয়ে থাকে এ হাটে। গরুর হাট থেকে মাসে সরকারের টোল আদায় হয় প্রায় এক কোটি টাকা।
স্থানীয় বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের বলেন, এই হাটটি এর আগে প্রায় ১০ বছর ইজারা নিয়ে চালিয়েছে এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে হাট পরিচালনা করেছে। চলতি বছর হাটের কোন ইজারা তারা না নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা হাটটি পরিচালনা করে কোটিকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।ছাত্রজনতার সংগ্রাম করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর হঠ্যাৎ প্রশাসন হাটটি বন্ধ করে রেখেছেন এটা দুঃখজন।এই হাট থেকে কোটিকোটি টাকা আত্মসাতে প্রশাসন ও জড়িত ছিলো বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন,সাতমাইল গরু হাটটি পরিচালনা করতে ১৩০ থেকে ১৫০ জন জনবল প্রয়োজন। এতো জনবল উপজেলা প্রশাসনের না থাকায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে আপাতত হাটটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
সম্পাদক: এস,কে রায়হান
ঠিকানাঃ প্রধান কার্যালয়ঃ নিরিবিলি বাজার, শাহপুর, তালা, সাতক্ষীরা। মোবাইল ০১৭১২-৯৯৫৮১৮ ইমেইল: somajchetona1122@gmail.com
somajchetona