রিয়াদ হোসেন: ‘মাদুর লাগবে…মাদুর, শীতল পাটি, নামাজের পাটি নিবেন, মাদুর’– এমন হাঁকডাকে রাস্তা বেয়ে চলেছে গায়ে পাতলা হ্যাংলা করে এক মধ্যেবয়সী যুবক। বয়স ষাটের কোটায় না পৌঁছালেও চোখে মুখে বয়সের ছাপ তাকে বেশ বৃদ্ধ’ই বানিয়ে ফেলেছে। সকাল থেকে ১৪ কিলোমিটার পথ দুরমুজের পর বিক্রি হয়েছে একটা নামাজারে মাদুর। তারপর আবারো হেঁটে চলেছেন কিন্তু বেচা-বিক্রি আর নেই বললেই চলে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এই পরিতোষ দাশ (৫২)। জন্ম সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে। পিতা মৃত বসুদেব দাশসহ পূর্ব পুরুষরা বাঁশের তৈরী ঝুঁড়ি ডালা বুনেই জীবিকা নির্বাহ করেছে। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের তৈরী জিনিসপত্রের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে এখান থেকে আরো ৩৬ বছর আগে ছেড়েছেন এ কাজ। বর্তমানে শীতল পাটি, প্লাস্টিকের মাদুর আর নামাজের পাটি বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
সূর্য উঠার আগেই নিজ গ্রাম তেতুলিয়া থেকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়েন পরিতোষ দাশ। এরপর প্রতিদিন আশাশুনি, পাইকগাছা এবং তালার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে মাথায় করে মাদুর নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। কোনদিন আট দশটা আবার কোনদিন একটা দুইটাও মাদুর বিক্রি হয় তার। এতে বেচাবিক্রি ভালো হলে ৪’শ, ৫’শ টাকা লাভ হয়। আবার কোনদিন খরচখরচা বাদ দিয়ে ১’শ টাকাও থাকে না৷
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, প্রায় ৩৬ বছর ধরে মাদুর বিক্রি করি। একসময় মেলির মাদুর বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ওই মাদুরের আর চল নেই। তাই প্লাস্টিকের মাদুর আর শীতল পাটি বিক্রি করি। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাদুর বিক্রি করি। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালায়। এ কাজে খুব বেশি লাভ হয় না৷ প্রতিদিন যা বিক্রি করি সন্ধ্যায় তার থেকে দোকান মালিককে কেনা টাকা দিয়ে যায়। আর লাভের অংশ দিয়ে বাজারঘাট করি। তবে রোজা সামনে থাকায় এ মৌসুমে নামাজের মাদুর তুলনামুলক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট মাদুরে একটু লাভও বেশি হয়। তাই এখন সময়টা একটু ভালো যাচ্ছে। তবে প্রতিদিন কীভাবে এতো পথ হেঁটেই মাদুর বিক্রি করেন এমন প্রশ্নের জবাবে পরিতোষ দাশ বলেন, হেঁটে হেঁটে ছাড়া মাদুর বিক্রি করা যায় না৷ অনেকে মাদুর দেখেও নেয় না, অনেক সময় ব্যয় করে দেয়। এজন্য ভ্যান কিংবা অন্য কোন যানবাহনেও উঠা হয় না। তবে বেচা শেষ হলেই অনেক সময় ভ্যানে করে বাড়ি ফিরি।