নুরুজ্জামান (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের মাহমুদুল হাসান সৌরভ (২১) উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ছনোগাও গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে। লেখাপড়া করত ছাতক ডিগ্রী কলেজে। তারা ৩ ভাই বোন। সৌরভের বড় চাচা কুদরত আলী দীর্ঘদিন যাবত ইতালি বসবাস করছেন। সৌরভ স্বপ্নের দেশ ইতালি যেতে মা-বাবা ও ভাইদের কাছে আবদার করে অনেকদিন ধরে।
বাবা স্থানীয় দালাল আবুল কাশেমের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। সেখানে তিনমাস চাকুরী করার পরে স্থানীয় দালাল কাশেমের ছেলে ইটালি প্রবাসী সাব্বিরের পরামর্শে স্থানীয় দালাল বড়খাল গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র আব্দুল বারেকের ছেলে রেজাউল করিম ও স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের সাথে ৭ লক্ষ টাকায় ইটালী পাঠানোর চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী গত ১৩ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ স্থানীয় মুরব্বিদের উপস্থিতিতে বাংলাবাজার জেএস ফার্মেসীতে বসে বারেকের ছেলে রেজাউল করিম ও স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের হাতে নগদ ৬ লক্ষ টাকা দেন। ১৭ এপ্রিল সকালে দালালের সহযোগীর মাধ্যমে লিবিয়া থেকে তার বাবার কাছে সৌরভ ভয়েস পাঠিয়ে খবর দেয়, সৌরভ মাফিয়াদের হাতে বন্দি। মাফিয়াদের হাত থেকে উদ্ধার করতে দালাল বারেকের মাধ্যমে ১৭ লক্ষ টাকা পাঠাতে হবে।
ছেলেকে উদ্ধার করতে স্থানীয় মুরিব্বীদের উপস্থিতিতে বড়খাল গ্রামের দলিল লেখক দেলোয়ার হোসেনের বাংলাবাজার অফিসে বসে বারেকের ছেলে রেজাউল করিম, স্ত্রী রাজিয়া খাতুন ও রেজাউল করিমের সম্বন্ধি সুমনের নিকট ৪ লক্ষ টাকা দেয়া হয়। টাকা দেয়ার আগে লিবিয়ার মাফিয়া চক্র সৌরভকে বেদম নির্যাতন করে। নির্যাতনের ছবি ও ভয়েস তার পরিবারকে ইমোতে পাঠায়। সৌরভ কাঁদতে কাঁদতে তার মা-বাবাকে বারবার টাকা দিতে বলে। ছেলেকে মাফিয়াদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচাতে এ পর্যন্ত তার অভিভাবকরা ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে আব্দুল বারেকের শ্যালক আব্দুল হামিদ মাফিয়াদের হাত থেকে সৌরভকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
মাফিয়া চক্রের দাবি, আরও ১৭ লাখ টাকা দিলে সৌরভকে ছেড়ে দেবে। এখন ১৭ লাখ টাকা দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। চিন্তায় মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বৃদ্ধ বাবা ছনোগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কোরবান আলী ও মাতা পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা লাভলী শোকে পাথর হয়ে আছেন।
সোমবার সকালে বাবা কোরবান আলী বলেন, সরকারের কাছে দাবি, আমার ছেলেকে লিবিয়ার মাফিয়াদের হাত থেকে উদ্ধার করে যেন দেশে ফিরিয়ে আনেন।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) অনুসন্ধানে জানা গেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলায় আরও ১০/১২ জন যুবক দালালদের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দি আছে। এদের মধ্য উপজেলার কুশিউড়া গ্রামের ইউছুব মিয়ার ছেলে নোমান ও বাঘমারা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সুমন মিয়া নামের দুই যুবক।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর জানান, স্থানীয় দালালদের মধ্য যদি কেউ এমন অপরাধ করে থাকে তবে অভিযোগ দিলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সম্পাদক: এস,কে রায়হান
ঠিকানাঃ প্রধান কার্যালয়ঃ নিরিবিলি বাজার, শাহপুর, তালা, সাতক্ষীরা। মোবাইল ০১৭১২-৯৯৫৮১৮ ইমেইল: somajchetona1122@gmail.com
somajchetona