সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের হাসারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে দেয়াল দিয়ে বসতভিটা নির্মাণ করে দিয়েছেন এক আওয়ামীলীগ নেতা। তার নাম মোঃ বুরহান মিয়া। তিনি উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের হাসারচর গ্রামের মৃত জানফর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় গত ১৫/১১/২০২৩ইং তারিখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নেজাবুল হক নিজে বাদি হয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরবারে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের হাসারচর গ্রামের প্রভাবশালী ভূমিখেকো বুরহান মিয়া আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে হাসারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিন শতক চারা রকম ভূমি দখল করে দেয়াল দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালে ডিসি খতিয়ানের ৫৩ শতক চারা রকম ভূমির মধ্যে ৩৮ শতক ভূমির দলিলমূলে সীমানা নির্ধারন করে হাসারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ভবণ নির্মাণের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বিদ্যালয়ের পাশে ভূমিখেকো আওয়ামীলীগ নামধারী বুরহান মিয়ার বসতভিঠা হওয়ার সুবাদে পেশিশক্তির জোরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ শতক ভূমি দখল করে দেয়াল দিয়ে বসতভিটা নির্মাণ করে বহাল তবিয়তে চললে ও স্থানীয় কোন অভিভাবকরা তার ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দামকী প্রদান করা হয়।
স্থানীয় একাধিক লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,বুরহান মিয়া সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ইতিমধ্যে নিরীহ মানুষদের জায়গাজমি দখলসহ নানান ধরনের অপকর্ম করে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। গত ১৮.০১.২০২২ সালে দখলকৃত জায়গাটুকু উদ্ধারের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ কামরুল বদরুল তৎকালীন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ারুজ্জামান বরাবরে আরো একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রমটি আলোর মুখ দেখেনি। তাদের দাবী ভূমিখেকো বুরহান মিয়ার কবল থেকে বিদ্যালয়ের দখলকৃত প্রায় ৩ শতক ভূমি উদ্ধারে প্রশাসন কার্যক্রম পদক্ষেপ নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। এদিকে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়ে দুটি ভবন ঘর থাকলেও, স্কুলের শহীদ মিনার নির্মানের জায়গাসহ অবশিষ্ট জায়গা দখল করে ভূমিখেকো বুরহান মিয়া বসতবাড়ি নির্মাণ করায় বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিনোদন খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী হাসারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নেজাবুল হক শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে বিদ্যালয়ের প্রায় তিনশতক জায়গা বুরহান কর্তৃক দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,প্রশাসনের তরফ থেকে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে সঠিক জায়গাটি মাফযোগের মাধ্যমে নির্ধারন করার পাশাপাশি দখলকৃত জায়গাটি উদ্ধারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বুরহান মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু জায়গা তার দেয়ালের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,কিভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি করা যায় সেই বিষয়ে গ্রামের মাতব্বরদের সাথে আলাপ আলোচনা তিনি করে সুরাহা করতে চান বলে জানান।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সেলিম খান বলেন,সার্ভেয়ার পাঠানো হবে মাফযোগ করার পর বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের বিষয়টি প্রমানিত হলে দখলকৃত জায়গাটুকু ফেরত আনা হবে। তিনি ইতিমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং দ্রুুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেছেন।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নুর হোসেন জানান,বিদ্যালয়ের পেছনের আনুমানিক দেড়-শতক জায়গা বুরহানের দখলে গিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন এবং বুরহান মিয়া ইতিমধ্যে প্রায় ত্রিশলাখ টাকা ব্যয় করে বিল্ডিং নির্মাণ করে ফেলেছেন। এজন্য বুরহান বিদ্যালয়ের সামনে কিছু জায়গা খরিদ করে বিদ্যালয়ের নামে দিতে চাইছেন বলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে সার্ভেয়ার পাঠানো হবে এবং বিদ্যালয়ের জায়গাটুকু মেজারমেন্ট করে দখল প্রমানিত হলে জায়গাটুকু উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২০.১১.২০২৩