শোয়েব হোসেন : মাদক সম্রাট মোহাম্মদ শামীম শেখ, পিতা -দেলোয়ার হোসেন। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের বড়ই বুনিয়ার বাসিন্দা।বড়ই বুনিয়া সহ আশেপাশের আরো কয়েকটি গ্রামে গড়ে তুলেছেন মাদকের এক বিশাল সাম্রাজ্য।রয়েছে ২০ থেকে ৩০ জনের একটি বিশাল বাহিনী।বড়ইবুনিয়া হোগলা বুনিয়া গ্রামসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রকাশ্য মাদক বিক্রয় করেন তিনি। মাদকের বিরুদ্ধে যদি কেউ প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদীর ওপরে নেমে আসে বিভিন্ন ধরনের পাশবিক নির্যাতন ও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালান এই শামীম। তার বিরুদ্ধে ভয় কেউ কথা বলার সাহস রাখেনা।কেউ থানায় অথবা প্রশাসনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতেও ভয় পায়।যদি কেউ প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে হুমকি দিয়ে বলে ‘তোর ঘরে ইয়াবা রেখে তোকেই মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিব’।
জানা গেছে, নাজিরপুরে প্রতিটা মাদক বিরোধী অভিযানে প্রথম কাতারে তার নাম থাকতো।কিন্তু, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে প্রতিবারই তার নাম মাদকের লিস্ট থেকে সরিয়ে দিতেন আর পুলিশি অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান খুলনা সোনাডাঙ্গায়।তার আপন বড় ভাই একজন সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহিন আলম।তিনি বলেন অনেক চেষ্টা করেছি ভাইকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য।কিন্তু, উল্টো আমার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করেছে ও হত্যার হুমকি দিয়েছে।
আমাকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।
দুই সন্তানের জনক এই শামীম শেখের স্ত্রী পাখি আক্তার জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার থেকে বয়সে বড় একটি মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সময়ে হাতেনাতে এলাকাবাসী তাকে ধরে ফেলে। কিন্তু,যারা তাকে হাতেনাতে ধরে তাদের নামেই সে আরো বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালায়।আমি স্ত্রী হিসেবে প্রতিবাদ করলে আমাকে নির্যাতন করেছে ও তার মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই আমার উপর অমানষিক নির্যাতন চালাতো।।অনেক প্রতিবাদ করেছি যে এই হারাম পথ ছেড়ে দাও।কিন্তু কোন কাজ হয়নি। উল্টো আমাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতো। বলতো তোর বাবার বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা এনে দে তাহলে ব্যাবসাটাকে আরও বড় করি।সেই যৌতুক না দেওয়ার কারনে দুইটি সন্তান একজনের বয়স ১০ বছর আরেকজনের ৫ বছর। এই সন্তান থাকার পরও অকারণে আমাকে তালাক দিয়েছে এবং ওই বয়স্ক মহিলার সঙ্গে সংসার করছে।অথচ তার সন্তানদের কোন ভরণ পোষণ সে দেয় না।তার রয়েছে অনেক নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক।আমি তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুক বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছি যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের কাছে রবিউল ইসলাম জয়, পান্না শেখ, রাজু, মারুফ মজুমদার, ইমরান হোসেন সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো বিভিন্ন এলাকাবাসী বলেন, শুধু মাদক ব্যবসা না অনেক নারীর সাথে সে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতিনিয়ত।বেশ কিছুদিন আগে রাতের বেলা আমরা এলাকাবাসী তাকে হাতেনাতে তাদেরকে ধরেছি বিবস্ত্র অবস্থায়। অথচ আমাদের নামে উল্টো বিভিন্ন অপপ্রচার চালায় এর বিরুদ্ধে যে কথা বলে তার বাহিনী দিয়ে তার উপরে নির্যাতন করে রাতের আধারে বাসা বাড়িতে হামলা করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ধরনের নোংরা অপপ্রচার করে যাতে অনেকেই সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে যায়। যার জন্য এর বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে কথা বলে না আর এলাকার তরুণ যুব সমাজকে এই শামীম বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে সমগ্র গ্রাম তরুণ যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মাটিভাংগা ডিগ্রী কলেজে ভর্তি করেছিলাম।এই শামীমের কারণে আমার ছেলেটি মাদকাসক্ত হয়ে গিয়েছে। আজ আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে। এখনই যদি এর প্রতিকার না করা যায় আমার ছেলের মত আরও অনেক ছেলে মাদকের ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইউপি সদস্য অনিরুজ্জামান অনিক বলেন, এই শামীম ভয়াবহ শক্তিশালী। রয়েছে তার সিন্ডিকেট বাহিনী। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ এসেছে কিন্তু, তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনা। রাতের আঁধারে বিভিন্ন মানুষের উপর নির্যাতন করে সে। আমি অতীতে বহুবার প্রশাসনের কাছে তার বিষয়ে অবহিত করেছি কিন্তু বিগত সরকারের দাপুটে প্রভাবে সে থাকতো সবকিছুর ঊর্ধ্বে, ধরাছোঁয়ার বাইরে।বর্তমান সরকারের কাছে জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে এই বড়ই বুনিয়া বাসিকে শামিম নামক ভয়ংকর দানবের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বিলু বলেন– আমরা কি করবো বলেন, প্রতিবাদ করলে রাতের আঁধারে যেকোনো ভাবে হামলা চালাবে। বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করবে।হুমকি ধামকি দিবে। এটা তো জানোয়ারের কাজ!আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন এলাকায় যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই বিভিন্নভাবে হয়রানি অত্যাচার করেছে কিনা।
নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, একটি স্পষ্ট মেসেজ দিতে চাই নাজিরপুর বাসীর উদ্দেশ্যে তা হলো — “বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান ঘোষণা করেছে। মাদক ব্যবসায়ী যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন বিন্দুমাত্র তাকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং তার বিরুদ্ধে খুব দ্রুত আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।যারা মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত আপনারা আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ জানান অথবা যে কোন ভাবে আমাদের কাছে তথ্য পৌঁছে দিন প্রয়োজনে আপনাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। নাজিরপুরে কোন মাদক ব্যবসায়ীর স্থান হবে না।”
শামীম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনারা যত বড় মাদক ব্যবসায়ী বলছেন আমি তত বড় ব্যবসায়ী না। টুকটাক কিছু করতাম তবে এখন আর তেমন একটা করি না।আর আপনারা নিউজ করে কিছুই করতে পারবেন না।আপনাদের যা মনে চায় তাই লেখেন।
বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ উঠেছে নাজিরপুর ছাড়াও খুলনার সোনাডাঙ্গা বাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও একটি মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি।জানা গেছে, খুলনার সোনাডাঙ্গা গিয়ে তিনি আত্মগোপন করেন এবং সেখানেও তিনি মাদকের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন!