আমাকে জেলে নিতে চাও তো নাও
আমাকে ফাঁসির মঞ্চে শেষ আরতি শোনাবে; তো শোনাও
আমি ভয় পাই না!
আমি ভয় পাই কেবল মায়ের চোখের জল!
মা কে যারা মা ভাবতে পারে নি
মা কে ভেবেছে পুরুষের গোলাম
তাদেরই — উদ্বিগ্ন উগ্র লাল চোখ
অকৃতজ্ঞায় ভরা আঁশটে নফস
মায়ের শালদুধের মুল্যহীন তুচ্ছতাকে আমি ভয় পাই।
আমি ভয় পাই —
মায়ের দিকে ক্ষিপ্র মেজাজের বলিষ্ঠ সব কুকুরকে!
আমাকে শুলে বিদ্ধ করো
ক্ষতবিক্ষত করে দাও সবুজ বুক
পু্ড়িয়ে দাও বুকের মাঝে অরণ্য
জ্বালিয়ে দাও দু-চোখ– তবুও ভয় পাই না!
আমি ভয় পাই আমার বোনের শ্লীলতাহানি।
আমার দেহে পেরেক ঠোকা আকাশ জমে মেঘ হলেই
দ্রোহে-তাপে-পাপে আমি পুড়ে খাক হয়ে যাই
আমার এক চিমটা ভীতু হৃদয়।
আমার বোনের বুকে অঙ্কিত বাংলাদেশকে
কেউ কলঙ্কিত করলে
মায়ের শাড়ির আঁচল ছিড়লে
ছিঁড়লে বোনের শাড়ির পেড়
আমার বোনের পিঠে নখের আঁচড়
আমার বোনের চুলের মুঠোতে আঘাত হলেই
কেবল কেঁপে যায় আমার বুকের আরশ
আর জ্বলে যায় আগুন আদ্যোপান্তের গল্পের পাতায়
ক্ষেপে যায় দু-চোখ নতুন ইতিহাসের গল্পমালায়-
বদলে দিতে নতুন পৃথিবীর পুরনো নিয়ম।
হে জাতির ভাই,
তোমরা প্রতিশোধ নেবে; তো নাও
বুক আলগা করে দিলাম
আমায় পুঁতে ফেলতে চাও ; তো ফেলো
নদীর চরে, এই জলের মাঝে কাদাবালিতে পূর্ণ করো
আমার চোখের কোটর
মুছে দাও চোখের মায়ায় প্রিয়ার ছায়া
অন্ধ করে দাও আমায়
তবুও ভয় পাই না।
আমি শুধু ভয়পাই শুয়োরের খোয়াড় থেকে
তেড়ে আসা বেজন্মাকে।
শুয়োরের চোখ খোঁজে–আমার বোন নাভির নিচে শাড়ি পরে কি না?
শুয়োর চেয়ে দেখে, আমার সহপাঠীর অন্তর্বাসের ফিতা লাল কি কালো!
শুয়োরের আঁচড়ে ফালা-ফালা হয়ে যায় ওড়নার প্রতিটি সুতোয় ঘুমিয়ে থাকা নারীর সত্তা
নারীর আঁচলের গিঁটে আটকে থাকা খুচরো পঁয়সার মত জমানো ভালবাসা বিলীনের গল্প!
লোলুপ্ত শুয়োর, ওঁৎ পেতে থাকে–
আমার বোন কবে নির্জনে যাবে
তাকে ভুলিয়ে বেশরমের মত তার শরীরের
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বিধ্বস্ত করবে!
শুয়োর ওঁৎ পেতে থাকে —
রাস্তায়, বাসে, বিদ্যাপিঠে-তীর্থে।
ধ্যানরত অবস্থায় যখন সৃষ্টিকর্তাকে দেখি –
হাজারো অভিযোগ দায়ের করি
পুরনো নিয়মের তারকাঁটা স্বভাবের মৃত্যু চেয়ে
খাস দিলে চাই “মানুষ হতে”
মানুষের মুখে বকুলের গন্ধ ভিক্ষা চেয়ে আকুতির যৌবন বেলায় ও আমি ভয় পাই
শুয়োরের খোয়াড় থেকে তেড়ে আসা সেই বেজন্মাকে
ঐ বুঝি এলো তীর্থে গোলমাল বাধাতে।
আমাকে ক্রুশবিদ্ধ করতে চাও যীশুর মত;করো
আমাকে আগুনে ফেলতে চাও নবী ইব্রাহিমের মত;ফেলো
আমাকে আছিয়ার মত ছিন্নভিন্ন করতে চাও ; করো
বেলালের মত বুকে পাথর চাপা দিতে চাও;দাও
তবুও ভয়ে কুণ্ঠিত হবে না এই বর্বর যুগের কবি।
আমি শুধু কুণ্ঠিত হই সত্যের গলাচাপা দেখলে।
আমি ভয় পাই না!আমি ভয় পাই না!
আমি শুধু ভয় পাই
মানচিত্রের উপর হায়েনার ছোবল
পতাকার উপর খামছে ধরা পুরনো শকুনের সাধু বেশ
ধর্মান্ধে নাৎসিদের মাতাল প্রলাপ
সংবিধানের কালো পাতায় মাখানো গরল
গণতন্ত্রের নামে রক্তের শরবত
স্বার্থের লোভে নেতার পায়ে চুমু
পেচার মুখে হীরক রাজার গল্প শুনলেই
ভয়ে আঁতকে ওঠে আমার প্রাণ!
মানুষ থেকে অল্প মানুষ
অল্প মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে উঠার গল্প শুনলেই
আমি কেবল ভীষণভাবে ডরি
ভীষণভাবে মরি।
রাজপথে মগজ ধোলাই
কলপের নিচে দগদগে নাটক
রাজনীতির বলৎকার
চামচিকার দল ভারী হলেই
হা জয়যুক্ত হয়েছে হা জয়যুক্ত হয়েছে ধ্বনিতে
স্পিকারের হাতুড়ির আঘাতে কাঁপতে থাকা সংসদ
রাজপথে গুলিবিদ্ধ ছাত্র-জনতা
রাজপথে কাফনের কাপড় পরে অধিকার আদায়
রাজপথে নতুন সভ্যতার জন্ম হবে বলে
আরেক ফাল্গুনের মত টগবগে দুপুরে চিৎকর শুনলেই
আমার গায়ের লোম উত্থিত হয়ে ওঠে
ভয়ে কেবল শিউরে উঠি!
আমি এক বর্বর রাষ্ট্রের কবি
যেখানে গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারের বাণীতে ডুবিয়ে মারা হয়
যেখানে ইতিহাস বিকৃত হয় নিজের মত
যেখানে দার্শনিক কবিদের হাতে কলম দেওয়া হয় স্বজনপ্রীতির
যেখানে জাতির বিবেকে খরা মৌসুম
সেখানে ভয়ে আমি কুঞ্চিত হয়ে যায়।
আমি কেবল মরে যায় সকাল দুপুর সন্ধ্যায়।
আমি মরে যাই, ভয়ে কেবল মরেই যাই–
আমার এক চিমটা ভীতু হৃদয়।
লেখকঃ
ফাতেহ মুনির
সা.স.ক (গনিত বিভাগ)