আঁতশবাজি বা পটকাবাজি মূলত: তিন ধরণের ক্ষতি করে। তা হলো জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক,শব্দ ও বায়ু দুষক । এগুলো ফুটানোর সাথে সাথে অপ্রিয় ও অশোভন ভাবে বিকট শব্দ হয় যা আমাদের চারিদিকে শব্দ দূষণ ঘটায়। এটা শিশু, বৃদ্ধসহ অসুস্থ্য রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়াও এর কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণী অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যু বরণ করে। আশেপাশে থাকা কুকুর-বিড়াল ও বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি ভয়ে ছুটাছুটি করে ।
জানা গেছে, এগুলো পুড়ে বা ফেঁটে গেলে এর ধুঁয়া থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক বায়ু দূষণ ঘটায় যা ফুসফুসের নানা রোগের কারণ হয়। এছাড়াও এই পটকাতে আঁতশ কাগজ, ছোট ছোট পাথরের টুকরা ও বিস্ফোরক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় যা বিস্ফোরণের সাথে সাথে মাটিতে পড়ে কঠিন বর্জ্যে পরিণত হয় ও পরিবেশ দূষণ ঘটায়। এতে শুধু মানুষ ও প্রাণী নয়,গাছ-পালারও নানান ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা আরও বেড়ে যাচ্ছে এবং সবাই অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে । এখনকার মতো উন্নত ও শিক্ষিত জাতি হিসেবে এমন কাজ অবশ্যই নিন্দনীয়, আপত্তিকর, বেহায়ামি এবং রাষ্ট্রীয়-সামাজিক অপরাধ বটেই!
বিবিধ ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা গেছে, এই পটকাবাজির মতো কাজ কোন দিনই কল্যাণময়ী হিসেবে পরিগনিত না হলেও ক্ষতিকর ও দু:খজনক হিসেবে চিরকাল তিক্ত, বিদঘুটে ও ঘৃনিত হয়ে থেকেছে। তাই আগত থার্টি ফার্স্ট নাইট, অন্য যে কোন অযুহাতে বা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই পটকা বা আঁতশবাজির মতো অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা উচিত। এর পাশাপাশি যে কোন বিনোদন কেন্দ্র বা পার্টি সেন্টারগুলো যেন রাত ১০ টার মধ্যে কিংবা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করা হয় এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।এসবের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে এবং এটি বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাবধানতা বজায় রাখা আমাদের সকলেরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । তাছাড়াও প্রভাবশালী মহল সহ স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি একান্ত জরুরি ভাবে জোরদার করা উচিত ।
কাজেই জনস্বার্থে, দেশ ও জাতির কল্যান ও উন্নয়ন কামনায় সারা বিশ্বের সকল ধর্ম,বর্ন ও জাতির প্রতি জোড়ালো দাবি ও অনুরোধ — আসুন আমরা নিরাপদ ও সুস্থ্য-সুন্দর ভাবে সপরিবারে নতুন আমেজে নতুন ভাবনায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। শুরু থেকেই এবারের নতুন বছর সবার জীবনে কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।নিজেরাও ভালো থাকি এবং সারা বিশ্বের সকল মানুষ এবং অন্যান্য সকল জীব-জন্তদেরও ভালো রাখি। এতেই প্রকৃত ভাবে ভালো থাকা সম্ভব। দেশ-প্রেমিক হিসেবে আরও চিন্তা করার জন্য পরামর্শ দেয়া উচিত বলে মনে করি যে এই ক্ষতিকারক আনন্দ অনুভূতির বিলুপ্তি ঘটাতে কল্যানময়ী ভাবে আনন্দ উদযাপনের লক্ষ্যে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নতুন কিছু একটা করে দেখাই। সুস্থ্য ধারার সুন্দর মানসিকতার এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সচেষ্ট হই।
হে জগতবাসী, আসুন অসুস্থ্য মানসিকতার মোহ ত্যাগ করে দেশ- জাতি সহ গোটা বিশ্বকে সুস্থ্য-সুন্দর পরিসরে নতুন কিছু দেখিয়ে-শিখিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করি। এভাবে নিত্য নতুন ভালো কাজে বিশ্বব্যাপী সুনাম ছিনিয়ে আনি।সারা বিশ্বের কল্যাণ কামনায় একটি আন্তর্জাতিক মানের মানবাধিকার সংস্থা “হিউম্যান এইড এন্ড ট্রাষ্ট ইন্টারন্যাশনাল” সহ আমাদের গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এই সচেতনতা মুলক পরামর্শ প্রদান সাপেক্ষে বিশেষ ভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। সবার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনায় অগ্রীম শুভ নববর্ষ।
এস. হোসেন মোল্লা (লেখক)
শিল্পী, শিক্ষক, সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী,রাষ্ট্রীয়-সামাজিক চিন্তাবিদ ও গবেষক।