সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার আশ্রাফীঃ চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:চাহিদা থাকার পরও চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট বন্ধ করতে যাচ্ছে জাজিরা এয়ারওয়েজ। নতুন বছরের আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম-কুয়েত রুটের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হচ্ছে কুয়েত ভিত্তিক এয়ারলাইন্সটি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও এয়ারলাইন্সটি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এয়ারক্র্যাপ্ট সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হতে যাওয়া এ রুট থেকে ফ্লাইট তুলে নেওয়া হচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে- খরচ পোষাতে না পেরেই বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এয়ারলাইন্সটি।
এর আগে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম-কুয়েত রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে কুয়েতের এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান জাজিরা এয়ারওয়েজ। শুরুর দিকে সপ্তাহে তিনদিন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে এয়ারলাইন্সটি। পরবর্তীতে যাত্রীদের চাহিদা বাড়ায় পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। যা চট্টগ্রাম-কুয়েত-জেদ্দার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটেও যেত। এরমধ্যে ব্যাপকভাবে ওমরাহ যাত্রীদের নিয়ে সৌদি আরব যাচ্ছিল এয়ারলাইন্সটি। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন দেখা দিয়েছে যাত্রীদের চাহিদার শীর্ষে থাকা বিমানটি।সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হওয়া জাজিরা এয়ারওয়েজের বেশিরভাগ যাত্রী জেদ্দা ও মধ্যপ্রাচ্যগামীর। যা চট্টগ্রাম থেকে কুয়েত হয়ে অন্যগন্তব্যে ছুটে যায়। এতেকরে অধিক জ্বালানি খরচের পাশাপাশি অন্যান্য খরচ বেশি হচ্ছে। বিপরীতে কুয়েত ব্যতীত অন্য রুটে নিয়মিতই পরিচালিত হয়ে আসছে ওমান ওয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া ফ্লাইট। যাতে সময়ও কম লাগছে। তাছাড়া আলোচ্য এ তিনটি ফ্লাইটের ভাড়ার সঙ্গে জাজিরা এয়ারওয়েজের ভাড়াও প্রায় সমমান। যার কারণে খরচ পোষাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে জাজিরার।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানটির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জাজিরা চালু হওয়ার পর ফেয়ার ছিল (আসা যাওয়া ভাড়া) ৮০ হাজারের বেশি। কিন্তু সেটি এখন ৬০ হাজারে নেমে এসেছে। কুয়েতের চেয়েও বেশি যাত্রী জেদ্দার পাওয়া যাচ্ছে। তাতে করে ফুয়েল খরচ ও অন্যান্য খরচ পোষানো যাচ্ছে না।’জানতে চাইলে জাজিরা এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) শামীম উল ইসলাম জয় বলেন, ‘এয়ারক্র্যাপ্ট সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য চট্টগ্রাম রুটের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে খুব শীঘ্রই আবারও ফ্লাইট চালু করা হবে। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে হয়তো এ রুটে নতুন এয়ারক্র্যাপ্ট যুক্ত হতে পারে।’চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, ‘বন্ধের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই জানা নেই। তবে এয়ারলাইন্সটির প্রচুর যাত্রী হয়।’সংশ্লিষ্টরা বলছেন- যাত্রীদের চাহিদা থাকার পরও হঠাৎ এয়ারলাইন্সটি বন্ধ হওয়ার ফলে দুর্ভোগে পড়তে হবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের কুয়েত প্রবাসী ও যাত্রীদের। যদিও খুব শীঘ্রই ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে বলে আশাবাদি সংশ্লিষ্টরা।
হজ্জ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘চালু হওয়ার পর থেকেই জাজিরা এয়ারলাইন্সের চাহিদা প্রচুর। কিন্তু এখন হঠাৎ বন্ধ হলে যাত্রীদের সেবা বিঘ্ন হবে। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- তাদের এয়ারক্র্যাপ্ট সংকট রয়েছে। যার কারণে সাময়িক বন্ধ থাকবে। তবে আশা করবো খুব শীঘ্রই এয়ারলাইন্সটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।চট্টগ্রাম এভিয়েশন ক্লাবের সভাপতি আসিফ চৌধুরী বলেন, ‘স্বল্প সময়ে যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়তা ও আস্থা অর্জন করেছিল জাজিরা এয়ারলাইন্স। কিন্তু সাময়িক সময়ের ছন্দপতনের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা। চট্টগ্রামবাসীর চাহিদার কথা বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই যাত্রী সেবা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবে।’