শাহরিয়ার কবির, পাইকগাছা (খুলনা ) প্রতিনিধিঃ নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে আমাদের পরিবেশ হুমকির মুখে। স্থানীয় সাংবাদিকদের পক্ষে এই হুমকির কারণগুলো চিহ্নিত করা সহজ। আর কারণগুলো চিহ্নিত করে সেটা গণমাধ্যমে যথাযথভাবে তুলে ধরা গেলে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা সম্ভব। তাই এ সকল বিষয়ে তৃণমূলের গণমাধ্যমকর্মীদের আরো বেশি দক্ষ ও দায়িত্বশীল হতে হবে। শুক্রবার খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাহমুদ কাটী অনির্বাণ লাইব্রেরি মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত কর্মশালা ও মতবিনিময় সভায় এ সব কথা বলেন তারা। ‘নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক ওই সভার আয়োজন করে ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র-এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজের বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব শেখ হেদায়েত হোসেন, বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য কৌশিক দে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলীম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক সানজিদুল হাসান, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এস এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজ, অনির্বাণ লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজ, তালার সাংবাদিক নারায়ণ মজুমদার ও কয়রার সাংবাদিক ইমতিয়াজ আহমেদ । এছাড়া ভার্চুয়ালি অংশ নেন অনির্বাণ লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা ডিআইজি জয়দেব ভদ্র ও ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশের প্রতিনিধি মো. নূর আলম শেখ।
সভায় বক্তারা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল এমনিতেই দুর্যোগের ঝুঁকিতে আছে। এরপর কপিলমুনিতে সেতু নির্মাণের নামে পিলার স্থাপন করে ২০ বছর ধরে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় নদীটি মৃতপ্রায়। এ ছাড়া দখল, দূষণের যে চিত্র দেখা গেছে তা উদ্বেগজনক। ঐতিহ্যবাহী নদীটি রক্ষায় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার কারণে কপোতাক্ষ নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েছে। দূর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় কপোতাক্ষ নদের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তারা আরো বলেন, কপোতাক্ষ নদের প্রবাহ স্বাভাবিক না রাখতে পারলে সাতক্ষীরা, খুলনা, যাশোর ও ঝিনাইদহ জেলার কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকায় বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই নদী রক্ষায় এখনই সচেতন হতে হবে, প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।সভা শেষে নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ভাঙ্গনকবলিত এবং দখল ও দুষণের শিকার কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। তারা ভূক্তভোগী জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতুর পিলার বসিয়ে রেখে নদীর গতিপ্রবাহ নষ্ট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তারা কপোতাক্ষ নদের বালিয়া অংশ থেকে আগড়ঘাটা পর্যন্ত খনন কাজ দ্রুত শুরুর দাবি জানান।