শাহরিয়ার কবির, নিজস্ব প্রতিবেদক ।।বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। পিঠা-পায়েস সাধারণত শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত এবং মুখরোচক খাদ্য হিসাবে বাঙালি সমাজে আদরণীয়। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে।চলছে পৌষ মাস, পাইকগাছায় ঘরে ঘরে চলছে যেন পিঠা উৎসব, সেই সাথে চলছে আত্মীয়স্বজন ও মেয়ে জামাই বাড়িতে এনে পিঠা খাওয়ায় উৎসব ও মিলোনমেলা। আর এই উৎসব পরিপূর্ণ করার জন্য মায়েরা ব্যস্ত সময় পার করছে।মায়ের হাতের যেকোনো খাবার খেতে কার না ভাল লাগে। আর সেটা যদি হয় পিঠা তাহলে তো কথাই নেই। ভাবলেই রসে ভরে যায় মুখ। আনন্দে নেচে উঠে মন। সকলেরই ইচ্ছে করে মায়ের হাতের বানানো পিঠা খেতে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়াও আছে চিতই পিঠা, দুধচিতই, ছিট পিঠা, দুধকুলি, ক্ষীরকুলি, তিলকুলি, পাটিসাপটা, ফুলঝুড়ি, ধুপি পিঠা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, মালপোয়া, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা ইত্যাদি। বাংলাদেশে শতাধিক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে।কালের গভীরে কিছু হারিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ইদানীং শহরেও পাওয়া যায় শীতের পিঠার স্বাদ। হিন্দু সমাজে যেমন নতুন ধানের নতুন চালে জমে ওঠে পৌষ-পার্বণ, মুসলমান সমাজেও তেমনই ফুটে ওঠে পিঠা-পায়েসের আনন্দ।সারা বছর কমবেশি মায়েরা পিঠা তৈরি করে খেতে দেয়, কিন্তু শীত কালে পিঠার স্বাদ যেন বেড়ে যায়। শীতকালে শুধুমাত্র খেজুরের রস পাওয়া যায়। তাই এখন প্রতিদিন সকালে রসের পায়েস ও সন্ধ্যায় রসে ভিজানো পিঠা,এলাকার ভাষায় তেলের পিঠা, নারকেলের কুলী পিঠা,চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও বিভিন্ন পিঠার সৌরবে ভরে উঠেছে পাইকগাছার প্রতিটি আঙিনা যেন উৎসব উৎসব পরিবেশ বিরাজ করছে।এখন শীতের সকালে কমবেশি প্রতিটি বাড়িতে নাস্তায় কিংবা বিকেলের আড্ডায় ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা খাওয়া বেশ জমে উঠেছে। শীতের আগমন ঘটলেই যেনো শুরু হয় গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এই উৎসব। এ সময়ে এই এলাকার চিত্রটাই পালটে যায়। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই যেমন ঘর গুলোতে আলো জ্বলতে থাকতে ঠিক শীতের প্রতিটি সন্ধ্যায় বাড়িতে বাড়িতে দেখা যাচ্ছে চুলোয় উনুন। মায়েরা তৈরি করছে পিঠা।
আগুনের তাপে হাত সেঁকা, চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে রাখার সময় এখন। প্রতি ঘরে মায়েরা এই সময়েই তৈরি করে নানা রকম পিঠা। নতুন চাল গুঁড়া করে দেওয়া হয় পিঠার রেসিপিতে। সঙ্গে যোগ করা হয় খেজুরের রস; গুড়, দুধ, চিনি প্রভৃতি উপকরণ। এ দেশের পিঠার রেসিপির শুরু আছে শেষ নেই।
শীত এলে আমাদের জন্য নানা রকম পিঠা যে তৈরী করেন মা যেমন ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটি সাপটা পিঠা, রসে ভিজানো পিঠা, পুলি পিঠা সহ আরো অনেক রকমের পিঠা।পিঠা না খেলে যেন শীতের পরিপূর্ণ আনন্দ পাওয়া যায় না।শুধু ঘরে ঘরে নয় পাইকগাছার কর্মজীবী মানুষেরা যেন শীতের পিঠার আমেজ থেকে বাদ না পড়ে সেজন্য কিছু কিছু জায়গায় , রাস্তার মোড়, হাট- বাজারগুলোতে পিঠার দোকান দেখা যাচ্ছ। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে চালের গুঁড়ো দিয়ে সুস্বাদু এই পিঠা বিক্রি ও খাওয়ার পালা। সবকিছু মিলিয়ে পাইকগাছায় পিঠা উৎসব পরিবেশ বিরাজ করছে।