শাহরিয়ার কবির,পাইকগাছা : খুলনার পাইকগাছায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে ৭ কৃষকের মধ্যে কৃষিযন্ত্র বিতরণ দেখানো হয়েছে। তবে যেসব উপকারভোগীর নাম তালিকায় রয়েছে, তাদের কারও কাছে এসব যন্ত্র পৌঁছায়নি।
উপকারভোগীদের বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষকও নন। যন্ত্র বিতরণের জন্য সরকারের দেওয়া উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) এ টাকা আত্মসাতে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পাইকগাছায় যন্ত্র বিতরণের উপকারভোগীদের তালিকা ধরে সরেজমিন ও নানা মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত অর্থবছরে পাইকগাছা উপজেলায় ৭ জন উপকারভোগীর মধ্যে প্রতিটি ৩০ লাখ করে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার ‘কম্বাইন হার্ভেস্টার’ বিতরণ দেখানো হয়েছে।পাইকগাছায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। পাইকগাছায় ১৫ লাখ টাকায় এটি পাওয়ার কথা।
জানা গেছে, ভর্তুকি দামে যন্ত্র কেনার জন্য কৃষকদের আবেদনের পর খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা বাছাই কমিটি। এতে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কৃষি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যরা। চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের পর উপকারভোগীর প্রত্যয়নপত্র দেন কৃষি কর্মকর্তা।ভর্তুকি বাদে বাকি টাকা দিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে কৃষক ডিলারের কাছ থেকে যন্ত্রটি সংগ্রহ করেন।
পাইকগাছা কৃষি অফিসের তালিকা অনুযায়ী, ভর্তুকি মূল্যে যন্ত্র পাওয়া কৃষকরা হলেন সোলাদানা ইউনিয়নের নারকেলপোতা গ্রামের কামরুল ইসলাম, গড়ইখালী ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম, কপিলমুনি ইউনিয়নের কাজিমুসা গ্রামের মিজানুর খাঁ, হরিঢালী ইউনিয়নের ইসমাইল হোসেন, গড়ইখালী ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামের উত্তম মণ্ডল, কানাখালী গ্রামের প্রদীপ সানা ও হরিঢালী ইউনিয়নের সোনাতনকাটি গ্রামের এছস্কেন্দার আলী। তাদের বাড়িতে হারভেস্টার যন্ত্র পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গড়ইখালী গ্রামের উপকারভোগী মুজাহিদুল ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। চাষাবাদের মতো কোনো জমি তাঁর নেই। ১৫ লাখ টাকা দিয়ে হার্ভেস্টার যন্ত্র কেনার সক্ষমতাও নেই তাঁর। তিনি বলেন, ‘জমি নেই, মেশিন কিনে কী করব।’
কানাখালী গ্রামের প্রদীপ সানা পেশায় মাছ(পোনা) ব্যবসায়ী। তাঁর নামে একটি হার্ভেস্টার যন্ত্র বিতরণ দেখানো হয়েছে। জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্র কী, তা বুঝতে পারেননি। পরে বলেন, ‘একটা যন্ত্র নিয়েছিলাম। তা এখন অফিসেই আছে।’ অফিস থেকে একটি প্রত্যয়ন নিতে হবে, তারপর এটা কাজের জন্য দিনাজপুর জেলায় পাঠাবেন। তার অনুকূলে কতটা জমি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাছ চাষ করতে যেয়ে অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সব জমা জমি অন্যের কাছে বন্ধক রাখা। তার অনুকূলে এক বিঘা জমিও নেই।
আরেক উপকারভোগী হরিঢালী গ্রামের
ইসমাইল হোসেন তিনি বলেন, ১৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে কৃষি অফিস থেকে যন্ত্রটি নিয়েছিলাম। এখন তা আমার কাছে নেই। কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি।
গড়ইখালী ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামের আরেক উপকারভোগী উত্তম কুমার মন্ডল তিনি বলেন আমার কাছে টাকা না থাকায় কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রটি নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার নেননি তবুও বিতরণের তালিকায় তার নাম দেখানো হয়েছে।সোলাদানা ইউনিয়নের নারকেলপোতা গ্রামের কামরুল ইসলাম তিনি পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী।তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন নেওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু টাকা জোগাড় করতে পারিনি তাই আর নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবুও বিতরণের তালিকায় তার নাম দেখানো হয়েছে। সোনাতনকাটি হরিঢালীর আরেক উপকারভোগী এছস্কেন্দার আলী তার কাছে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকারভোগীদের তালিকায় থাকা নামের বেশির ভাগই প্রকৃত কৃষক নন। কেউ ব্যবসায়ী,কেউ রাজনৈতিক কর্মী, আছেন শ্রমজীবীও। তবুও তাদের নামে কৃষিযন্ত্র বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। অথচ কারও কাছে এ যন্ত্র পৌঁছায়নি। এসব কাগজে কলমে বিতরণ দেখিয়ে ভর্তুকির টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে পাইকগাছার কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশের ভাষ্য, তালিকায় থাকা উপকারভোগীদের মধ্যে কয়েকজন হার্ভেস্টার যন্ত্র নিয়েছেন অনেকেই নেননি।যারা নিয়েছে তাদের ভিতর থেকে দুটি হার্ভেস্টার ইতি মধ্যে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।তবে যেসব উপকারভোগী যন্ত্র নিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন, তাদের কারও কাছে যন্ত্র পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন এর অফিসিয়াল (মুঠোফোনে) যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সরকারের উন্নয়ন সহায়তার টাকা এভাবে পরিকল্পিতভাবে নয়ছয় করা বড় অপরাধ উল্লেখ করে এলাকার সচেতন মহল বলেন,জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।