ঘুম পাড়ানী গান থেকে আরম্ভ করে মহাকাব্য সবই কবিতা। আর কবিতা মানুষের ইতিহাসের সমবয়সী। মহাকালের আবর্তে সভ্যতা ও মানুষের জীবন যাত্রা ও মনন হয়েছে ভিন্নতর এবং উন্নততর। কবিতার শক্তি জীবন, মৃত্যু, পারিপার্শ্বিকতা এবং কখনও তা অনুভূতির সীমানা ছাড়িয়ে যায়। প্রেম, নৈতিকতা, ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন ও সমকাল কবিতায় ছায়াপাত ঘটবেই। তবুও কবিতা ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান কোনটিই নয়। সবকিছুকে ছুঁয়ে, সবকিছুকে ছাপিয়ে কবিতা কবিতাই। স্বর, সুর, শব্দের মালা গেঁথেই মানুষ কাঁদে, হাসে, সুখ-দুঃখ, আকুতি, অনুভূতি প্রকাশ করে। উদীয়মান লেখিকা, কবি ও সাহিত্যিক রৌনকা আফরুজ সরকার তাঁর গ্রন্থের নামকরণ করেছেন “ভালোবাসা এক মহাকাব্য”। তিনি তাঁর কাব্যের পঙক্তিতে রূপক ও ছন্দের অলংকরণে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অনুসন্ধানী কাব্য, বিচিত্র ভূ-প্রকৃতি, মাটি ও মানুষের আবেগ, আবেশ, অনুভূতি। লিখেছেন সমাজ সচেতনতার দীপ্ত কথা। ছন্দ কবিতা, গীতি কবিতায় সমান সিদ্ধহস্ত। অল্পকালের মধ্যেই তিনি স্বীকৃতি স্বরূপ নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। আজ যে কবি’র প্রশংসা করেছি, এক কথায় তাঁর বৈচিত্র্যময় জীবনশৈলী কবিকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। হ্যাঁ, কবি ও সাহিত্যিক রৌনকা আফরুজ সরকারের কথাই বলছি। জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশী নাগরিক। নরসিংদী জেলার এক নিভৃত গ্রামে কেটেছে শৈশব আর কেটেছে কৈশোরের দিনগুলো। তাই শৈশবের সাথে তাঁর নাড়ীর টান, জন্মান্তরের পরিচয় আর সুনিবিড় সখ্যতা রয়েছে। তিনি ভালোবাসেন মানুষ, প্রকৃতি, গান এবং কবিতা। দেশপ্রেম, জাগ্রত মানবতাবোধ এবং নিজের স্বত্বাকে চেনার আঁকুতি তাঁর নব প্রজন্মের কাছে। “ভালোবাসা এক মহাকাব্য” গ্রন্থটি পড়ে আমার মনে হয়েছে চমৎকার এক গীতি কবিতার সম্ভার। নম্র উচ্চারণ, সহজ কথন, সপটু রচনা শৈলীতে পুষ্ট। সব থেকে যেটা বলার তাঁর নিঃসর্গের সঙ্গে গভীর যোগ এবং তাঁর লেখনীতে মানুষ ও নিঃসর্গ একেবারে হাত ধরাধরি করে চলেছে। কবি’র ছন্দ, মাত্রা, অন্তমিল একেবারে নিখুঁত। যারা মাটি ও মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আত্ম পরিচয়ের শেখর খুঁজেন, তাদের জন্য এক অনন্য সৃজন এই মহাকাব্য। সর্বোপরি তাঁর সত্য, সুন্দর ও মহৎ কাজের এই প্রয়াস প্রশংসার দাবি রাখে এবং মানুষের অনুভূতির সন্ধানে “ভালোবাসা এক মহাকাব্য” একক কাব্যটি গ্রন্থ জগতে নিঃসন্দেহে একটি মূল্যবান সংযোজন। এতে প্রেম-বিরহের পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়বস্তু স্থান পেয়েছে যা সাহিত্যপ্রেমীদের দিবে নতুন রসদ, নির্মল বিনোদন তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। পরিশেষে কবি’র জন্য সুস্থ, সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।
ধন্যবাদান্তে :
শ ম দেলোয়ার জাহান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
ডাক বাংলা সাহিত্য একাডেমি
ঢাকা, বাংলাদেশ।