মাসুদ সিকদার : ঝালকাঠির রাজাপুরের ৯ নং লেবুবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন সোহাগের বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণির ৫ শিশু শিক্ষার্থীকে স্কুল মাঠে ফেলে মধ্য যুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন ও মারপীটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্লাসরুমে খেলা করার ও স্কুল পড়া না পারার অপবাদে এ কান্ড ঘটিয়েছে ওই শিক্ষক। সোমবার এ ঘটনায় সাতুরিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সমীরেন্দু বিশ্বাসকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম নুরুল আলম মৃধা। রোববার বিকেলে উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের ৯ নং লেবুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন সোহাগের এ অমানুষিক কান্ডে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হয়ে জ¦রে আক্রান্ত এবং অপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় ক্লাসে উপস্থিতি কমে গেছে। আহত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন সোহাগ বøাকবোর্ডে দুটি প্রশ্ন লিখে তা পড়তে বলে অন্য রুমে চলে অন্য রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে এসে শিশু শিক্ষার্থীদের পরা না হওয়ায় এবং ক্লাসে বসে দুষ্টমী করার অপবাদ দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুরসালিন, আবু সালেহ, সিয়াম, নাজমুল ও শাকিবকে প্রথমে স্কাস রুমে বসে চড় থাপ্পর মারেসহ নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। তাতেও খ্যান্ত হয়নি শিক্ষক সোহাগ । পরে তাদের টেনে হিচড়ে মাঠে নামিয়ে মধ্য যুগীয়কায়দায় নির্যাতন ও বেত দিয়ে বেধরক মারধর করতে করতে মাঠে ফেলেও ৫ শিক্ষার্থীকে অমানুষিক প্রহার করা হয়। মাঠে ফেলে বেধরক মারধর করে করলেও কয়েক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় অপর দুই ছাত্রী আয়শা ও সামিয়াকেও মারধরের ভয় দেখালে এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পরে। ঘটনা দেখে স্কুলের অপর শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে অপর দুই শিক্ষক এসে অভিযুক্ত শিক্ষকের হাত থেকে বেত টেনে নিয়ে যায় এবং শান্ত করে। এ ঘটনার পর ৫ম শ্রেণির ৩৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরা ভয়ে স্কুলে আসেনি বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের। অভিয্ক্তু শিক্ষকের বিচার ও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়। আহত ৫ম শ্রেণির ছাত্র মুরসালিনে মা লালয়া বেগম জানান, তার শিশু ছেলেকে কখনও তারা নিজেরাও গায়ে হাত দেন না কিন্তু ওই শিক্ষক সোহাগ শিশু শিক্ষার্থীর কানে সজোরে চর মারাসহ বেত দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঔষধ খাওয়ালেও রাতে প্রচন্ড জ¦রে আক্রান্ত হয়। ওই শিক্ষক স্কুলে থাকলে এ স্কুলে আর তার ছেলেকে পড়াবেন না বলেও জানান তিনি। সকালে প্রাইভেট ও পড়তে পারেনি এবং স্কুলেও আসতে পারেনি। অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকুরি চ্যুত করা সহ কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি। ৫ম শ্রেণির ছাত্র আহত আবু সালেহের মা মাকসুদা বেগম জানান, তার না পড়িয়ে পড়তে দিয়ে অন্যত্র চলে যান শিক্ষক সোহাগ। কিছু না পড়িয়ে এভাবে পড়া দেয়ায় শিশুরা খুজে পড়া বের করে পড়তে ও শিখুতে না পারায় শিশুরা পারেনি। সেই শিশুকে মারধর করা হয়েছে, তাকে ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে, তারপরও সারারাত বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চিল্লায়ে উঠেছে, সারারাত ঘুমাতে পারেনি। ভয় পেয়েছে, তাই এ স্কুলে আর আসতে চায় না। শিক্ষক সোহাগকে স্কুল থেকে না সরালে এ স্কুলে আর তার শিশুকে পড়াবেন না বলেও জানান তিনি। ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাইফ মাহমুদের মা খাদিজা বেগম জানান, ছাত্র ছেলে ভয়ে বাড়িতে বসেও কান্নাকাটি করেছে। এমনভাবে শিশুদের মারধরা করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের ভয়ে স্কুলে আসতে চাচ্ছে না এবং তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি করা হয়। অভিযুক্ত লেবুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন সোহাগ জানান, ক্লাসে না পরে কলম খেলায় এবং বেয়াদবি করায় কয়েক শিক্ষার্থীকে চড় থাপ্পার ও কয়েকটি বেত্রাঘাত করা হয়েছে। শিক্ষাথীরা পড়ালেখা না করা ও ক্লাসে দুষ্টমী করায় শাসন না করা হয়েছে। লেবুবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি শিক্ষা অফিসার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে থেকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ওই দিন দুজন শিক্ষক মিলে তাকে নিভৃত করেছে তার পরেও শিক্ষার্থীদের বেদরক মারধর করা হয়েছে এবং কয়েক শিক্ষার্থী অচেতন হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। এর আগেও অভিযুক্ত এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মারধর ও উগ্র আচরনের অভিযোগ রযেছে। তার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ও সাতুরিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সমীরেন্দু বিশ্বসের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে জানান, মঙ্গলবার ওই স্কুলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়া হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম নুরুল আলম মৃধা জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। সাতুরিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হযেছে। প্রতিবেদন পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিতপূবর্ক অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিনকে সাংবাদিকরা অবহিত করলে তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।