সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পোড়াকাটলা দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫পদে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ৫টি পদের তিনটিতেই নিয়োগ বাগিয়েছেন সভাপতির ও প্রধান শিক্ষকের স্বজনরা। নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির আভাস পেয়ে আদালতে মামলাও করা হয়। কিন্তু আদালতের সেই আদেশকেও এড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে নিয়োগ প্রত্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে করে ঐ এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। খোদ জেলা শিক্ষা অফিসারও বিষয়টি নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। অভিভাবকরাও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে।
সূত্রমতে, গত ২জানুয়ারি শ্যামনগর পোড়াকাটলা দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ল্যাব সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। এরপর নিয়োগে দেন-দরবার ও দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। প্রার্থীদের নিকট থেকে দাবি করা পদ হিসেবে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। এক হাজার ব্যাংক ড্রাফটসহ দিয়ে অর্ধ শতাধিক প্রার্থী ৫টি পদে আবেদন করেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের প্রবেশপত্রে তারিখ ও সময় পরিবর্তন করে ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়েছে যা আপত্তিকর।
অবৈধভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে সভাপতির স্ত্রীকে ল্যাব সহকারী, ভাগ্নেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং প্রধান শিক্ষকের চাচাতো ভাইকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন এসব পদে তাদের কাছে ১০ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। যারা ঘুষ দিতে পেরেছে তাদের চাকরি হয়েছে।
এদিকে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাতানো নিয়োগ বোর্ড ও দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে জানাজানি হলে আদালতে ১১জনকে বিবাদী করে মামলা করেন উপজেলার ভামিয়া গ্রামের মৃত নাটু রপ্তানের ছেলে তাপস রপ্তান। সেই মামলার আদেশ পেয়ে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ডের আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৯৯ সালে পোড়াকাটলা দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন।
তারা আরও জানান, এখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২৬০জন, শিক্ষকের সংখ্যা ১১জন, চতুর্থ শ্রিণীর ৭জন মোট ১৮জনের মতো শিক্ষক কর্মচারি নিয়ে বিদ্যালয় পরিচলনা করে থাকে। স¤প্রতি ১১ মার্চ ২৩ তারিখে বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি উপেক্ষা করে যে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে তাতে এলাকার অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে অভিযুক্তরা সভাপতির স্ত্রী, ভাগ্নে এবং প্রধান শিক্ষকের চাচাতো ভাইকে নিয়োগ দেওয়া ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে ফ্লুইড ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও ঘুষ-দুর্নীতির কথা স্বীকার করছেন না।
ভ‚মিদাতা সদস্য সত্য ভ‚ষণ বিশ্বাস বলেন, বিদ্যালয়ে যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এটা নাকি সরকারি বিধি মোতাবেক দেওয়া হয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, পোড়াকাটলা দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫পদে প্রায় কোটি টাকা বাণিজ্য করা
হয়েছে। এখানে সভাপতি-প্রধান শিক্ষক তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে ফরেস্ট ম্যাধমিক বিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি বিশ্বাস বলেন, শুনেছি নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়েছে। যারা পরীক্ষায় ভালো করেছে তাদের নাকি নেওয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক অনাঙ্গ কুমার মন্ডল বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় ও লোকাল পত্রিকায় নিযোগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়াসহ অধিক প্রচারের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ নিয়োগে প্রায় ৫০জনের অধিক প্রার্থী অবেদন করেন। সেখান থেকে যারা পরীক্ষায় ভালো করেছে তাদের নেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রার্থী নেওয়া হয়নি। তবে প্রার্থীদের প্রবেশপত্রে ফ্লুইড লাগানো এবং চাচাতো ভাইকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের কথা স্বীকার করেন তিনি।
মামলার বাদি তাপস রপ্তান বলেন, এ অবৈধ নিয়োগ বাতিলের জন্য আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বরে দাবি করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ডালিম ঘরামি বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম মেনে পরীক্ষার মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগ দিয়েছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ তেজারাত বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার বলেন, পোড়াকাটলা দীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫পদে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। শুনেছি, আদালতে মামলাও হয়েছে। মামলা চলাকালীন নিয়োগ বোর্ড বসানো ঠিক হয়নি। আমাদের সকলের আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিৎ। প্রবেশপত্রে ফ্লুইড ব্যবহার হয়ে থাকলে সঙ্গত কারণে সন্দেহ থাকবে। এটা অবশ্যই অনিয়ম ও আপত্তিকর। আমাদের এ বিষয়ে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে।